প্রায় সিকি শতক পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেস সভাপতি হতে চলেছেন। সোমবার সভাপতি পদের সেই নির্বাচন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মল্লিকার্জুন খাড়গে ও শশী থারুরের মধ্যে সরাসরি লড়াই। দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তর এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রদেশ কংগ্রেস কার্যালয়ে দিনভর ভোট গ্রহণ চলবে। ৯ হাজারের কিছু বেশি প্রতিনিধি গোপন ব্যালটে ঠিক করবেন ৮০ বছরের খাড়গে, না ৬৬ বছরের থারুর, কার হাতে থাকবে দলের ভার।
রাহুল গান্ধীসহ যেসব কংগ্রেস প্রতিনিধি ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়ে এই মুহূর্তে কর্ণাটকে রয়েছেন, তাঁদের ভোটদানের জন্য দল বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। কর্ণাটকের বেলারিতে পদযাত্রীদের শিবিরের কাছে খোলা হয়েছে বিশেষ পোলিং বুথ। রাহুলের সহযাত্রী এআইসিসি ও প্রদেশ কংগ্রেসের প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি ওই বুথে ভোট দেবেন বলে গতকাল রোববার জানান কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। এ ধরনের বিশেষ বুথের ব্যবস্থা এই প্রথম। আজ সে জন্য ভারত জোড়ো যাত্রার বিরতি। সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের এ যাত্রা গত শনিবার এক হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বেলারিতে পৌঁছায়। যাত্রা শুরু হয়েছিল গত ৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে।
নির্বাচন তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন এআইসিসি নেতা মধুসূদন মিস্ত্রি। তিনি জানান, প্রতি রাজ্যে কমবেশি ২০০ ভোটারের জন্য একটি করে বুথ খোলা হবে। দুই প্রার্থীর মধ্যে যাঁকে পছন্দ, তাঁর নামের পাশে থাকা খোপে ‘১’ লিখতে হবে। ব্যালটপত্রে কোনো রাজ্যের নাম বা সংখ্যা লেখা থাকবে না। কাজেই কোন রাজ্যের কোন প্রতিনিধি কাকে ভোট দিচ্ছেন, তা গোপন থাকবে। ১৯ অক্টোবর ভোট গণনা। সেদিন সব বাক্সের ব্যালট একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে।
রাহুল গান্ধী ২০১৭ সালে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে। এর আগে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০০০ সালে। সোনিয়া গান্ধী ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়েছিলেন রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদকে। নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে শেষবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কংগ্রেস কোষাধ্যক্ষ সীতারাম কেশরী। ১৯৯৭ সালে। হারিয়েছিলেন শারদ পাওয়ার ও রাজেশ পাইলটকে। প্রায় সিকি শতক পর পরিবারের বাইরের কেউ আরও একবার দলের সভাপতি ঘোষিত হবেন ১৯ অক্টোবর।
পাল্লা অবশ্যই ভারী প্রবীণ খাড়গের। সরাসরি জানানো না হলেও তিনিই যে গান্ধী পরিবারের পছন্দের ব্যক্তি, সে বার্তা ছড়িয়ে গেছে। শনিবার বেলারিতে রাহুলের পাশে হেঁটে খাড়গেও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। শশী থারুর তবু চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। শনিবার গুয়াহাটিতে প্রচারে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘খাড়গে আমারও নেতা। আমরা কেউই একে অপরের শত্রু নই। জিতলে আমি কংগ্রেসে পরিবর্তন ঘটাব।’
সাংগঠনিক কী কী পরিবর্তন তিনি আনতে চান, থারুর তা লিখিতভাবে প্রত্যেক ভোটারকে পাঠিয়েছেন। সেই অর্থে এই প্রথম সভাপতি পদের কোনো প্রার্থী নিজস্ব নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করলেন। থারুর বলেছেন, যিনিই জিতুন, জয় হবে কংগ্রেসের। গুয়াহাটিতে তিনি বলেন, ‘আমাকে যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁরা কেউ গান্ধী পরিবারের বিরোধী নন। এ ধারণাই ভুল। গান্ধীরা সব সময় কংগ্রেসের সঙ্গে আছেন। আমরাও।’ তিনি আরও বলেন, বয়স্ক নেতারা খাড়গেকে পছন্দ করছেন ঠিকই, কিন্তু যুব সম্প্রদায় ও কর্মীদের কাছ থেকে তিনি (থারুর) প্রবল সাড়া পাচ্ছেন। সভাপতি পদে জিতলে তাঁর প্রথম কাজ হবে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা রোখা।
১৯৯৭ সালের নির্বাচনে ৭ হাজার ৪৬০টি ভোট পড়েছিল। এর মধ্যে সীতারাম কেশরী পেয়েছিলেন ৬ হাজার ২২৪ ভোট, শারদ পাওয়ার ৮৮৮ ও রাজেশ পাইলট ৩৫৪। এবার গান্ধী পরিবারের অঘোষিত পছন্দের প্রার্থী খাড়গেকে চ্যালেঞ্জ জানানো থারুর কত ভোট পান, এ নির্বাচনের মূল আকর্ষণ সেটাই।