পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে দালাল ধরে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন পলি বেগম (৪৫)। সেখানে যাওয়ার পরই তাঁর ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদির একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হতে হয় পলিকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। সেখান থেকে ভোর পৌনে তিনটায় বিমানে ওঠেন পলি। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
বিমানবন্দরে নেমে স্বামী আসির উদ্দিনের মুঠোফোনে পলি বেগম বলেন, ‘আট মাসের প্রথম ১৫ দিন ভালো ছিলাম। প্রথম প্রথম ঘরের দরজা খোলা রাখা হতো। এরপর থেকে তালা দেওয়া হয়। এই আট মাস বাইরে বের হতে পারিনি। স্বামীর সঙ্গে কয়েক দিন কথা বলেছি। পরে ফোনটিও ভেঙে ফেলা হয়। মারধর করে মৃতপ্রায় অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মনে হচ্ছিল মরেই যাব। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরলাম। আমার স্বামী আমার জন্য অনেক করেছেন। আপনারাও পাশে ছিলেন। দেশে আপনজনের কাছে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে।’
হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে কফিলের (মালিক) বাসায় নেন। সেখান থেকে হাতে তিন মাসের বেতন ধরিয়ে বিমানবন্দরের টিকিট কেটে দেয়। টিকিটও ওই তিন মাসের টাকা থেকে নেওয়া। কাপড়চোপড় কিছুই দেয়নি। মোবাইলও দেয়নি। আমি একটি নরকে ছিলাম।
পলি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে কফিলের (মালিক) বাসায় নেন। সেখান থেকে হাতে তিন মাসের বেতন ধরিয়ে বিমানবন্দরের টিকিট কেটে দেয়। টিকিটও ওই তিন মাসের টাকা থেকে নেওয়া। কাপড়চোপড় কিছুই দেয়নি। মোবাইলও দেয়নি। আমি একটি নরকে ছিলাম। এর জন্য বিচার চাই।’
পলির স্বামী আসির উদ্দিন বলেন, গত রাতে তাঁর কাছে ফোন দেন পলি। জানান, বাংলাদেশ সময় ভোরে বিমানে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন তিনি। আরও কিছু শোনার আগেই ফোনটি কেটে যায়। সে জন্য আজ দুপুর থেকে বিমানবন্দরে স্ত্রীর অপেক্ষায় বসে ছিলেন তিনি। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পলি বিমান থেকে নামেন। এখন তিনি বাড়ির পথে। মোটামুটি সুস্থ পলি। তাঁর এখন বিশ্রাম দরকার।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পলির বাড়ি গাজীপুরে। তাঁর বিয়ে হয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাটাজোর গ্রামে। পলিকে নির্যাতনের বিষয়ে ১১ মে ঢাকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সেলে লিখিত অভিযোগ করেন পলির স্বামী আসির উদ্দিন।
অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১৯ অক্টোবর মেসার্স জেনিয়া ওভারসিজের (আরএল-১২২০) মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন পলি। সেখানে যাওয়ার পর থেকে তাঁর স্ত্রীকে অত্যাচার, মারধর, নির্যাতন করা হচ্ছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁর স্ত্রীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। বিষয়টি তিনি এজেন্সিকে জানালেও সেখান থেকে কোনো সহায়তা পাননি বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন।
অভিযোগের পরপরই পলির স্বামী জানতে পারেন, নির্যাতনের শিকার পলিকে ১৬ মে সৌদি আরবের রিয়াদের অ্যাটলাস জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এই খবর পরিবার জানত না। ওই হাসপাতালে রিংকু শেখ নামের ভারতের কলকাতার এক নাগরিক কাজ করেন। রিংকু শেখের সহায়তায় পলি ইমোতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিতে আকুতি জানান পলি। সে সময় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পলি দেশে ফেরার আকুতি জানান। এ নিয়ে ১৮ মে অনলাইনে ‘পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে, নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (প্রশাসন) উপপরিচালক জোহরা মনসুর বলেন, তাঁদের কাছে অভিযোগ আসার পরপরই তাঁরা এজেন্সিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। পলির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথাও তাঁরা জানিয়েছিলেন। এরপরই এজেন্সি ব্যবস্থা নেয়।
জেনিয়া ওভারসিজ এজেন্সির কম্পিউটার অপারেটর মো. ইমাম হাসান বলেন, পলি গত রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানতেন না যে আজই তিনি দেশে ফিরছেন। তাঁরা বিকেলে জানতে পেরেছেন আজ দেশে ফিরবেন পলি। তাঁর সব বকেয়া পরিশোধ করা হবে। তিনি দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁর স্বামী কোনো যোগাযোগ করেননি। বরং দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আগে যোগাযোগ করলে আগেই ব্যবস্থা নিতেন বলে তিনি জানান।