রাতের শেষ প্রহরে আচমকা কালবৈশাখী। সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। কালবৈশাখী স্থায়ী হয় ভোররাত চারটা থেকে চারটা চার মিনিট পর্যন্ত। মিনিট চারেকের সেই ঝড়ের প্রভাব থেকে গেছে দুপুর পর্যন্ত। স্বাভাবিক হয়নি পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ।
ঝড়ে উপড়ে পড়েছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, বিধ্বস্ত হয়েছে বসতঘর। ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসল আর সবজির। গাছের নিচে চাপা পড়ে কাহালু ও শাজাহানপুর উপজেলায় দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। আহত ব্যক্তিদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত দুজন হলেন কাহালুর কালাই ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের শাহিন আলম প্রধান (৪২) ও শাজাহানপুরের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুল হালিম (৪২)। শাহিন প্রধান ঘটনাস্থলেই আর আবদুল হালিম শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর শনিবার দুপুরে মারা যান। কাহালু ও শাজাহানপুর থানা-পুলিশ পৃথকভাবে দুজনের নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে শনিবার ঝড়ের পর থেকেই ভেঙে পড়ে শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা। ভোর ৪টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় শহরজুড়ে বন্ধ থাকে পৌরসভার পানি সরবরাহ। অচল হয়ে পড়ে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা। বেলা দুইটার দিকে শহরের কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কালবৈশাখীতে প্রাণহানি কিংবা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো জেলা প্রশাসন পায়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছে।
বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, শনিবার ভোর চারটায় কালবৈশাখী শুরু হয়। স্থায়ী হয় চার মিনিট। ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ। ভোর পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
কাহালু থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাতে ধান কাটা–মাড়াইয়ের কাজ শেষে মাঝপাড়া গ্রামের একটি বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন শাহিন আলম প্রধানসহ তিন শ্রমিক। ঝড়ের সময় তিনজনের ওপর একটি বড় পাকুড়গাছ উপড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই শাহিন নিহত হন। আহত হন মিঠু ও টুকু নামে অপর দুই শ্রমিক।
শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঝড়ের সময় বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুল হালিমের বসতঘরে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। আহত হালিমকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পর তিনি মারা যান। হালিম বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে মালি পদে কর্মরত ছিলেন।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, ঝড়ে ফসলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে।