পোশাকের কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে হেনস্তার শিকার তরুণী মারমুখী ভির থেকে বাঁচতে স্টেশন মাষ্টারের কক্ষে আশ্রয় নিয়ে জানতে চান, ‘পোশাকের জন্য আমাকে মারবে!’
তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ‘কোনো অভিযোগ না পাওয়ার’ কারণে গত বুধবারের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী রেল স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার নাইয়ুম মিয়া, হৈ চৈ শুনে বের হতে হতে দেখি একটা মেয়ে দৌঁড়ায়া আসে আর বাঁচান বাঁচান বলে আমার রুমে ঢোকে। পরে ছেলে দুটোও ঢুকলো। আমি গেট আটকে গিয়ে সাথে সাথে পুলিশকে ইনফর্ম করলাম যেন তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।
এসময় মেয়েটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে কি হয়েছে। মেয়েটি শুধু আমাকে বলে- আচ্ছা বলেনতো এদেশে কি সবাইকে শাড়ী ও সালোয়ার কামিজ পরতে হবে? এ জন্য আমাকে মারবে? – এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে।
পরে পুলিশ এসে ওই তরুণী ও তার সঙ্গীদের ট্রেনে তুলে দেয়।
গত বুধবার সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে নরসিংদীতে বেড়াতে এসেছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। নরসিংদী রেল স্টেশনে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। তরুণীর পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও টপস এবং তার সঙ্গী দুই তরুণের একজনের হাতে ট্যাটু ছিল।
স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী তাদের ইঙ্গিত করে নোংরা মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে ওই নারী ইচ্ছে করে তাদের সাথে ঝগড়ায় জড়ান। এ সময় রেল স্টেশনের কিছু বখাটে লোকজন হঠাৎ করে ছুটে এসে ওই তরুণ-তরুণীদের এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন এবং ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি করেন। পরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী নিজেকে বাঁচাতে স্টেশন মাস্টারের রুমে আশ্রয় নেন।
ফেসবুকে ঘটনাটির একটি ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, জিন্স ও টপস পরিহিত এক তরুণী কেন এ ধরণের পোশাক পরেছেন সেটি তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকে জিজ্ঞাসা করছেন চশমা পরিহিত এক ব্যক্তি।
এসময় আরও লোকজন তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে যান এবং প্রশ্নকর্তা ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটি হয় ওই তরুণদের। এ সময় তরুণী তাদের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে লাল টি শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে পেছন থেকে এগিয়ে গিয়ে ওই তরুণীকে আঘাত করতে দেখা যায় এবং আক্রান্ত তরুণী চিৎকার দিয়ে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে যান।
ঘটনার সময় স্টেশন মাষ্টারের দায়িত্বে থাকা নাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘হৈ চৈ শুনে বের হতে হতে দেখি একটা মেয়ে দৌঁড়ায়া আসে আর বাঁচান বাঁচান বলে আমার রুমে ঢোকে। পরে ছেলে দুটোও ঢুকলো। আমি গেট আটকে গিয়ে সাথে সাথে পুলিশকে ইনফর্ম করলাম যেন তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এরপর আক্রান্ত তরুণী ও তার সাথে থাকা দুই তরুণীকে কক্ষে বসানোর ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে স্টেশন মাষ্টার ঘটনার বর্ণনা বলেন, মেয়েটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে কি হয়েছে। মেয়েটি শুধু আমাকে বলে- ‘আচ্ছা বলেনতো এদেশে কি সবাইকে শাড়ী ও সালোয়ার কামিজ পরতে হবে? এ জন্য আমাকে মারবে?’
ভুক্তভোগী তরুণীও জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিয়ে সাহায্য চান বলে স্টেশন সূত্রে জানা যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ও তরুণী ও তার সহযোগীদের ঢাকাগামী ট্রেনে তুলে দেয়। ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণী ও হেনস্তাকারী কারও পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহেদ আলী পাঠান শুক্রবার বলেন, ঘটনাটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি। এটি যেহেতু রেলওয়ে স্টেশনে হয়েছে তাই রেলপুলিশ বিষয়টি দেখবে।
তবে হেনস্তাকারীদের শনাক্ত করতে নিজেদের ‘অপারগতা’র কথা জানিয়েছে রেলপুলিশ। ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, তিনি ঘটনা শুনেছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী বা ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এ বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। তবে আমাদের কাছে চলে আসার পর তাঁরা (তরুণ-তরুণী) নিরাপদেই ছিলেন। এই ঘটনায় আমাদের কাছে ভুক্তভোগী বা তাঁর কোনো আত্মীয়-স্বজন এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই আমরা এই ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তারপরও যদি কিছু করার থাকে তাহলে পুলিশ করবে।