কানাডার পর এবার ভারতে পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) পাচার করা টাকায় গড়া বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি ও কয়েকশ বিঘা মূল্যবান সম্পত্তি।
বাংলাদেশ থেকে ‘হাওলা’র (হুন্ডি) মাধ্যমে আসা কোটি কোটি টাকায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় জমি-বাড়ি কেনার হদিস পেয়েছে ভারত সরকারের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।অন্তত সাত থেকে আটটি জায়গায় শুক্রবার তল্লাশি চালিয়ে ইডির গোয়েন্দারা প্রাসাদ বাড়ি ও কয়েকশ বিঘা মূল্যবান জমির হদিস পেয়েছেন। একইসঙ্গে তল্লাশিতে কলকাতা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় বেআইনি আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও বার্তা পেয়েই তল্লাশিতে সক্রিয় হয়েছে ভারতীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বাংলাদেশ থেকে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের পাঠানো বেআইনি অর্থ সুকুমার মৃধা নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে সম্পত্তি কিনতে ব্যয় করা হয়েছিল। মূলত পিকে হালদারের খবর জানতে গিয়েই এদিন অশোকনগরে সুকুমার নামের ওই মাছ ব্যবসায়ীর বিপুল সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি।
বাংলাদেশের পিকেকাণ্ডে যুক্ত অপরাধীদের নাগাল পেতে ভোরে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার বহু এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।সীমান্তের কাছে অশোকনগর, দমদম, বাইপাসের কাছে একাধিক জোনে চলে এই তল্লাশি। এর মধ্যে শুধু অশোকনগরেই বাংলাদেশ থেকে হাওলার মাধ্যমে আসা টাকায় তৈরি তিনটি বাড়িতে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি চালান ইডি কর্মকর্তারা। এদিন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে তিনটি জায়গায় একসঙ্গে অভিযান চালান তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অশোকনগরের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা মূলত বাংলাদেশে থাকেন। পিকে হালদার মারফত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাতটি ভুয়া সংস্থার নামে টাকা তোলা হতো। ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা বেআইনি লেনদেন হয়।
ইডির সূত্রে খবর, সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসার আড়ালে হাওলার মাধ্যমে এদেশে (পশ্চিমবঙ্গে) টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জমি-বাড়ি কেনেন। অশোকনগরে একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে এই সুকুমার মৃধার। পিকে হালদারের মাধ্যমে এদেশে টাকা নিয়ে আসেন সুকুমার মৃধা। এদিন অশোকনগরে সুকুমার মৃধাসহ প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্র নামে তিনজনের বাড়িতেও হানা দেন ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু এই তিনজনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি পিকে হালদারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না- তা এখনো স্পষ্ট করেনি ইডি।
সুকুমার মৃধার সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলে সূত্রের খবর। বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালার যে টাকা আসত এদেশে, তা খাটানো হতো একাধিক ব্যবসায়। আর এভাবেই এদেশে ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন সুকুমার মৃধা।
জানা গেছে, অশোকনগরে সুকুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি হাতে পেয়েছেন ইডি কর্মকর্তারা। সেই নথি প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকেও পাঠানো হবে। গোটা চক্রের হদিস পেতে তৎপর রয়েছে ভারতের এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত পিকে হালদার এখন কানাডায় পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যেই তার কয়েকজন বান্ধবী ও সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পিকে হালদারকে গ্রেফতারে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।