ব্যাংক কর্মকর্তা মনসুর আলীর বাসায় নানা ধরনের ভাজা-পোড়ার রান্না হতো। মাসে তেল লাগত চার থেকে পাঁচ লিটার। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় আর ভাজা-পোড়া চলবে না তাঁর বাসায়। মাসে দুই লিটার তেল দিয়েই সারতে চান রান্নাবান্না। শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাজারের নাহার স্টোর থেকে এক লিটার তেল কেনেন মনসুর আলী। কেনাকাটার এক ফাঁকে তিনি বললেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের তালিকা ছোট হবে। যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকু করবেন। ভাজা-পোড়া বেশি করা যাবে না।
বাজারে তেলের দাম একলাফে লিটারপ্রতি ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মনসুর আলীর মতো ক্রেতারা। অনেকেই রান্নায় তেল কম ব্যবহার করছেন। অনেকেই সয়াবিনের বদলে খোলা পাম তেল কিনছেন। এমনই একজন পারভিন সুলতানা। তাঁর সঙ্গে কথা হয় নগরের বিবিরহাট বাজার এলাকায়। তিনি আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতেন। এখন কিনছেন খোলা পাম তেল।
পারভিন সুলতানা বলেন, খোলা তেলের মান নিয়ে সন্দেহ ছিল। এ কারণে খোলা তেল ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এখন বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ১৯৮ টাকায়। এত টাকা দিয়ে তেল কিনলে অন্যান্য জিনিস কিনতে পারবেন না। তাই তেলের ব্যবহার কমাবেন আর খোলা পাম তেল ব্যবহার করবেন।
এদিকে চট্টগ্রামের বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। নগরের ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে, বহদ্দারহাট, বিবিরহাট কাঁচাবাজার ও কয়েকটি অলিগলি ঘুরে ১১টি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া যায়নি। দোকানিরা বলছেন, কোম্পানির পরিবেশকেরা তাঁদের তেল দিচ্ছেন না। কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের আমির শাহ জেনারেল স্টোরের মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, তেলের চরম সংকট চলছে। কোম্পানি তেল দিতে পারছে না। তবে ৮ মে তেল পাওয়ার কথা রয়েছে। জালাল স্টোরের মালিক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, ঈদের আগে থেকেই বাজারে তেলের সংকট চলছে।
চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। এক লিটারের বোতলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তা দিতে পারছেন না কোম্পানির পরিবেশকেরা।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। সয়াবিন তেলের এমন সংকট আগে দেখেননি তিনি। তাঁর দোকানে তিন লিটারের একটি বোতল ছিল। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে কয়েকটি কোম্পানি তেল দিয়েছিল। এরপর আর পাননি। আবদুল মান্নান বলেন, তেল নিয়ে এমন মাতামাতি কখনো দেখেননি। একলাফে এত টাকা বাড়েনি। এখন ক্রেতারা তেল না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
আবদুল মান্নানের দোকানের নাম শাহজালাল স্টোর। তাঁর দোকানে ঘণ্টাখানেক বসে কয়েকজন ক্রেতাকে পাওয়া গেল, যাঁরা এসেছিলেন সয়াবিন তেল কিনতে। কিন্তু ফিরেছেন খালি হাতে। এ দোকান থেকে ২০ গজ এগোলেই সেলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। শাহজালাল স্টোরে তিন লিটার তেল থাকলেও সেলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কোনো তেল ছিল না। দোকানমালিক সেলিম উল্লাহর ছেলে সাখাওয়াত সামি বলেন, তেল পাচ্ছেন না দুই সপ্তাহ ধরে। আগে যা পেয়েছেন, তা বিক্রি হয়ে গেছে। লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছেন। আর কোম্পানির কাছে তেল খুঁজলে বলে, আমদানি নেই।
একে তো ঈদের বন্ধ, তার ওপর শুক্রবার ছুটির দিন—দুইয়ে মিলে নগরের অধিকাংশ বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট ছিল বন্ধ। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে সব মিলিয়ে চারটি দোকান খোলা ছিল। এর মধ্যে নাহার স্টোরে তেল পাওয়া গেছে সব মিলিয়ে ১৫ লিটার। ওই দোকানে পাক্কা এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চারজন ক্রেতাকে পাওয়া গেছে, যাঁরা তেল কিনতে এসেছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা মনসুর আলীও ছিলেন চারজনের মধ্যে।
বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জানে আলমও তেল কিনতে গিয়ে পাননি। তিনি বলেন, বাজারে তেল নেই। কোম্পানি দিচ্ছে না। আর কেউ তেল মজুত করছেন কি না, তা নিয়মিত তদারক করছেন তিনি।
বাজারে তেলের সংকটের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খোলা সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ৪৪ টাকা। আর পাম তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৪২ টাকা।