পড়া মনে রাখার আধুনিক উপায় কি কি? পড়া মনে রাখার আধুনিক উপায় জানতে চাইলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন। পুরো আর্টিকেলটিতে আমরা পড়া মনে রাখার আধুনিক উপায় বর্ণনা করেছি।
বেশি বেশি অনুশীলন ও পড়া করা:
যখন তা বারবার অনুশীলন ও পড়া দেয়া হয় তখনই আমাদের ব্রেইন ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি গুলোকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে । বারবার অনুশীলন ও পড়া দেয়ার ফলে ব্রেইনের স্মৃতি গঠনের স্থানে গাঠনিক পরিবর্তন হয় যা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে সাহায্য করে। তাই বেশি বেশি অনুশীলন ও পড়া করা পড়া মনে রাখার অন্যতম কৌশল।
লিখে লিখে বা ছবি এঁকে পড়ার অভ্যাস:
ছবি আঁকলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় কিংবা কোন জিনিস পড়ার সাথে সাথে লিখলে । কারণ নিউরোসায়েন্সের মতে, কিছু লিখলে বা ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা উদ্দীপিত হয় এবং ছবি বা লেখাটিকে স্থায়ী মেমরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে। ফলে পড়া টি মস্তিষ্কতে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সাধারণভাবেও বুঝা যায়, বইতে যেসব বিষয় ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয় তা-ই আমাদের বেশি মনে থাকে। পরীক্ষার সময়ও চোখের সামনে বইয়ের ছবিটিই ভেসে উঠে। তাই লিখে বা ছবি এঁকে পড়া অনেক বেশি কার্যকর।
বিরতি নিয়ে রিভিশন
জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘসের মতে, যে কোনো কিছু পড়ার এক ঘণ্টা পর আমাদের মনে থাকে সেটির মাত্র ৪৪ শতাংশ । তাই আমাদের উচিত তাৎক্ষণিক রিভিশন না দিয়ে, একটু বিরতি দিয়ে একই বিষয় আবার পড়া। তাতে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিরতি দিয়ে বারবার পড়লে যে কোনো পড়াই মনে থাকে অনেক দিন।
ফাইনম্যান পদ্ধতি:
পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফাইনম্যান পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। অন্যদের কাছে খুব সহজভাবে কিছু বোঝানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ফাইনম্যান পদ্ধতি। পড়ার পর আপনি যদি অন্য কাউকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করেন, তাহলে সেই পড়া মনে রাখার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিছু শেখানোর সময়, আপনাকে আপনার পছন্দ মতো পাঠটি সাজাতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে। আপনার মাথায় গেঁথে যাওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে যা পড়াটি ।
সন্ধ্যার পর পড়াশোনা করা:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সকাল দশটার আগে মানুষের ব্রেন ক্রিয়াশীল হয় না। এই সময়ের পর থেকে ধীরে ধীরে ব্রেনের ক্রিয়াশীলতা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বিকালের পরে ব্রেনের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে। তাই সকালের পড়া থেকে বিকাল বা সন্ধ্যার পর পড়া বেশী কার্যকর।
পর্যাপ্ত ঘুম:
ব্রেন মূলত স্মৃতি তৈরির কাজ করে ঘুমের ভিতর। গবেষণায় দেখা গেছে সারাদিনের কাজ বা ঘটনাগুলো ঘুমের সময় মেমোরিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে যে কোন তথ্য মেমোরিতে রূপান্তরিত করতে চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
মুখস্থ বিদ্যাকে না বলা:
মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়। পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয় সচেতনভাবে কোন কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যাক্তির নাম, বিজ্ঞানের কোন সূত্র ইত্যাদি বুঝে মুখস্থ করতে হবে।
রিভাইজ:
গবেষণায় দেখা গেছে আমরা আজকে সারাদিন যত কিছু পড়ি শুনি জানি বা দেখি তা পাঁচ দিন পর চার ভাগের তিন ভাগই ভুলে যাই। এ ভুলে ঠেকানোর জন্য কিছু টিপস আছে যেমন: ৪৫ মিনিট পর ১৫ মিনিট ব্রেক এবং সেই ব্রেকে মনে মনে সে পড়াটা রিভাইজ দেয়া এবং কোথাও আটকে গেলে তা আবার দেখে নেয়া। আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়ে আগামীকাল ঘুমানোর আগে উক্ত পড়া রিভাইজ দেয়া। তারপর এক সপ্তাহ পর পুনরায় রিভাইজ দিলে দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
পোমোডোরো পদ্ধতি:
অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া আমাদের এক নিত্য সমস্যা কিংবা পড়াশোনার মাঝখানে মুঠোফোন হাতে নিয়ে ইউটিউবে,ফেসবুক ঢুঁ দেওয়া । যার ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে এবং পড়া ঠিকমতো না হওয়ায় তা মনে থাকার সম্ভাবনাও বেশ কমে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পোমোডোরো পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এটি মূলত সময় ব্যবস্থাপনার একটি কৌশল। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে ফ্র্যাঞ্চেস্কো নামের এক উদ্যোক্তা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ইতালীয় শব্দ পমোডোরো অর্থ ‘টমেটো সস’।
ফ্র্যাঞ্চেস্কোর টমেটোর আকারের টেবিল ঘড়ি থেকেই মূলত এর নামকরণ। এই পদ্ধতিতে একজন মানুষ মোট ২৫ মিনিট সময় নিয়ে কোনো একটি কাজ করবেন এবং কাজ শেষে ৫ মিনিটের বিরতি নেবেন। ওই পঁচিশ মিনিট নিজেকে অন্য সবকিছু থেকে দূরে রাখতে হবে। আর বিরতির পাঁচ মিনিটকে বেছে নিতে হবে অন্য যে কোনো কাজ কিংবা বিশ্রামের জন্য। এতে করে মূল কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে, কাজের প্রভাবও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই পদ্ধতি পড়াশোনায় প্রয়োগ করলে পড়া হবে আরও কার্যকর, আর মনেও থাকবে লম্বা সময় পর্যন্ত।
পর্যাপ্ত ঘুম:
যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জেসিকা পেইন এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মী মিলে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে জানা যায়, পড়াশোনা শেষে নির্দিষ্ট সময় ঘুমালে তা পড়া মনে রাখায় বেশ সহায়তা করে। তাই লম্বা সময় পড়াশোনার পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। যাঁরা সারা রাত জেগে সকালে পরীক্ষা দিতে অভ্যস্ত, অনেক সময় দেখা যায় তাঁদের পরীক্ষা খারাপ হয়। এ গবেষণা থেকে নিশ্চয়ই এর কারণ বোঝা যায়।
নেমোনিক পদ্ধতি:
অনেক ছোট তথ্য মনে রাখার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। ছড়া, গল্প, ছবি, ইত্যাদির মধ্যে তথ্য যুক্ত করে মনে রাখাকে আরও সহজ করাই হচ্ছে এই পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য। মূলত ভোকাবুলারি, বিভিন্ন সাল কিংবা যে কোনো ছোট তথ্য মনে রাখার ক্ষেত্রে এই কৌশল হয়ে উঠতে পারে বেশ কার্যকর।
আগ্রহ তৈরি:
আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসা। খেলা বা মুভি দেখার সময় আপনি যেমন আগ্রহ ও জেতার আসা নিয়ে বসেন তেমনি পড়ার সময়ও নিজের ভিতর থেকে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। মনে থাকে না,পড়া কঠিন, বুঝিনা এসব পূর্বধারণা থেকে বেরিয়ে খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। পড়াশুনা আমাদের সবার কাছে কমবেশি কঠিন বিষয়। আর এ কঠিন বিষয়টিকে যদি সহজ ও মনে রাখার উপযোগী করতে হয় তাহলে আগ্রহ থাকাটা আবশ্যক। কেননা যে কাজে আগ্রহ থাকবে না সে কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন হয় না।
কনসেপ্ট ট্রি:
কনসেপ্ট ট্রি হলো পড়া মনে রাখার ভালো কৌশল । এ পদ্ধতিতে কোন একটি বিষয় শিখার আগে পুরো অধ্যায়টিকে সাতটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য একটি লাইন করে সারমর্ম লিখতে হবে। তারপর খাতায় একটি গাছ একে সাতটি সারমর্মকে গাছের এক একটি পাতায় লিখে রাখতে হবে। তারপর পাতাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বুলালেই আধ্যায়টি সম্পর্কে একটি পুর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। এটি একটি পরিক্ষিত বৈজ্ঞানিক ধারণা।
কী ওয়ার্ড:
যে কোন বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। সাতটি রংয়ের প্রথম আদ্যাক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। তেমনি আবার ইংরেজী ‘লেফটেনেন্ট’((Lie,u,ten,ant) ) শব্দটির বানান মনে রাখতে ‘মিথ্যা তুমি দশটি পিপিলিকা’ মনে রাখলেই বানানটি হয়ে যাবে।
অল্প অল্প করে মনোযোগ:
কোন কিছু মনে রাখতে হলে তা বিভিন্ন অংশ বা ভাগ করে পড়া বেশ উপকারী। যেমন: ৪৬৭৮৯০ এ সংখ্যাটি মনে রাখা যতটা সহজ তার চাইতে ৪৬৭ এবং ৮৯০ মনে রাখা আরও বেশী সহজ। আমরা পাঠ্য বইয়ের অনেক সংখ্যা পড়তে ভয় পাই কিন্তু বড় সংখ্যা কয়েক ভাগে ভাগ করে পড়লে মনে রাখা সহজ। কারণ আমাদের ব্রেন অনেক বড় বিষয়ের চেয়ে ছোট বিষয় বেশি মনে রাখতে পারে।
মার্কার ব্যবহার করা:
এটা বেশ কার্যকর অনেকে পড়ার সময় মার্কার ব্যবহার করে । তখন ঐ শব্দ বা বাক্যের উপর আগ্রহ ও আকর্ষণ বেড়ে যায় কারণ যখন কোন কিছু মার্ক করা হয় । পাশাপাশি এর উপর ব্রেনের ভিজ্যুয়াল এফেক্ট বেড়ে যায়। ফলে মনে রাখতে সুবিধা হয়।