🍀সদকায়ে জারিয়ার খাত সমূহ🍀
আমরা সবাই জানি, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর পর একজন মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি দুনিয়াতে এমন কিছু কাজ, কথা বা সম্পদ রেখে যেতে পারেন যার সওয়াব আপনার আমলনামায় মৃত্যুর পরও যুক্ত হতে থাকবে। এমন কিছু সদকায়ে জারিয়ার খাত নিচে উল্লেখ করছি-
১। কোনো পিচ্চিকে সুরা ফাতিহা শিখান। কারণ কোনো নামাজই এই সূরা ছাড়া শুদ্ধ হয় না। এই পিচ্চি কাউকে শেখালে তার সমান সওয়াবও পাবেন, আবার যাকে শেখালেন সে যদি রেগুলার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, তবে যতবার ঐ সূরা পড়ছে ততবার আপনার আমল নামায়ও সওয়াব লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ!
২। রাস্তায় কিংবা বাড়ির আশেপাশে ফলের গাছ লাগান। আপনার লাগানো গাছ যতদিন থাকবে এবং তার ফল ও পাতায় যেসব মানুষ ও জীবজন্তু উপকৃত হবে, তার সবগুলো সওয়াব আপনার আমল নামায় লেখা হবে।
৩। কোথাও মসজিদ নির্মাণের কাজ সংগঠিত হতে দেখলে কমপক্ষে ৫ টাকা হলেও দান করুন। কিয়ামত পর্যন্ত তার সওয়াব পাবেন।
৪। কোনো হাফেজিয়া মাদ্রাসার বাচ্চাকে কুরআন কিনে দিন। চিন্তা করুন, আপনার কিনে দেয়া কুরআন পড়ে সে হাফেজ হচ্ছে। আল্লাহু আকবার!
৫। বাজার, মসজিদ বা রাস্তায় নলকূপ বসাতে পারেন। এখানে থেকে পানি পানে যত মানুষের তৃষ্ণা নিবারিত হবে ততগুলো সওয়াব আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে।
৬। আপনি যদি ভালো লেখালেখি করতে পারেন। তবে এই লেখালেখি হতে পারে আপনার সদকায়ে জারিয়ার অন্যতম মাধ্যম। আপনার লেখার মাধ্যমেই মানুষকে ইসলামের কথা জানান। আল্লাহর বাণী ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস মানুষের কাছে প্রচার করুন।
আপনার কোনো লেখা পড়ে কারো মাঝে যদি সামান্যতমও পরিবর্তন আসে, সে যদি একটি ভালো গুণ অর্জন করতে পারে তবে এর মাধ্যমেও আপনি অপরিসীম সওয়াবের অধিকারী হবেন।
৭। ভালো কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নির্দেশ এর কথা কুরআনে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। সুতরাং কাউকে কোনো মন্দ কাজের দিকে পা বাড়াতে দেখলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিন আল্লাহর নির্দেশ। হতে পারে সে কল্যাণের পথে অগ্রসর হবে। আর আপনিও লুফে নিবেন আল্লাহর পুরষ্কার।
৮। উপহার হিসেবে কাউকে দিতে পারেন জায়নামাজ, কুরআন, মিসওয়াক, আসমুদ নামক সুরমা, রাইহান ফুলের আতর, ভাবোদয়কারী কিছু বই। সাথে দিতে পারেন সুন্নাত অনুসারে আমলের ছোট্ট একটি বই।
এরপর কথাচ্ছলে তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন, আপনার দেয়া জিনিসগুলোর গুরুত্ব। যেমন- ওজুর আগে মিসওয়াক করে অজু করলে এবং সেই ওযুতে নামাজের সওয়াব অনেক গুণ বেড়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
লক্ষ্য করুন, অনেকেই কিন্তু ওযুর আগে মিসওয়াক করেন না। আর আপনি যখন মিসওয়াকের গুরুত্ব এভাবে বুঝিয়ে বলবেন, তখন কিন্তু আপনি হারিয়ে যাওয়া একটি সুন্নাত জীবিত করছেন। এর গুরুত্ব নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।
৯। অভাবী কিন্তু লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারে না, এমন কাউকে খুঁজে বের করে তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সদকার একটি বড় অংশ ব্যয় করতে পারেন। অটোরিকশা, সবজি ভ্যান, মুদি দোকান, পরিপুষ্ট গাভী, সেলাই মেশিন ইত্যাদি সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে দিতে পারেন।
১০। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলে একটি ইউনিক ইসলামিক অ্যাপ তৈরি করে ফেলুন। যেমন বর্তমানে খুবই ইফেক্টিভ অ্যাপগুলোর মাঝে রয়েছে- ইসলামী যিন্দেগী, হিসনুল মুসলিম, প্রভৃতি।
১১। ছেলেদের ক্ষেত্রে-
কন্ঠস্বরে স্বচ্ছতা, যেকোনো ভাষার(যে ভাষায় আপনি এক্সপার্ট) সুস্পষ্ট উচ্চারণ, ঘটনা প্রবাহের সাথে কন্ঠস্বরের ওঠানামা কিংবা যথার্থ জায়গায় সঠিক আবেগের প্রকাশ, প্রভৃতি ; এক কথায় আরজে দের মত আপনার কথা বলার ধরণে এমন আর্ট থাকে, তবে আপনি ইসলামিক ইউটিউবার হতে পারেন। আপনার চ্যানেলে আপনি আপনার পছন্দমত সাবজেক্ট নিয়ে চমৎকার উপস্থাপনার মাধ্যমে উম্মাহর খেদমত করতে পারেন।
১২। তাজবীদে ভাল দখল থাকলে আপনি অন্যকে কুরআন শেখাতে পারেন।
সবশেষে যা বলব, তা হলো সন্তানকে আলিম, হাফিজ অথবা দ্বীনদার হতে সাহায্য করুন। আপনার মৃত্যুর পর এই সন্তান সবসময় তার প্রতিটা মুনাজাতে আপনাকে স্মরণ রাখবে, ইন শা আল্লহ।
লেখাঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।