ঈদ সামনে রেখে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী বেসরকারি লঞ্চগুলোতে আরেক দফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ডেকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০ টাকা আর প্রতিটি কেবিনে ২০০ টাকা।
যুক্তি হিসেবে লঞ্চমালিকেরা বলেছেন, ঈদের সময় লঞ্চ চালানোয় খরচ হয় বেশি। তা সমন্বয় করতেই বাড়া বাড়াতে হচ্ছে তাঁদের। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানে না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
করোনাভাইরাস মহামারির পর এবারের ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়ি ফেরার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে লঞ্চমালিকেরা আবার ভাড়া বাড়ানোয় যাত্রীরা চাপে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও তাঁরা নিরুপায়। জাহিদুর রহমান নামের একজন যাত্রী বলেন, ৩০ এপ্রিল তিনি ঢাকা থেকে বরিশালে আসার জন্য একটি সিঙ্গেল কেবিনের আগাম টিকিট নিয়েছেন আরও প্রায় এক সপ্তাহ আগে। দেড় হাজার টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে এই টিকিট পেয়েছেন।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কয়েক মাস আগেই সড়কপথের গণপরিবহনের মতো লঞ্চেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। গত বছরের ৩ নভেম্বর সরকার ডিজেলের মূল্য বাড়ায় ২৩ শতাংশ। একলাফে ১৫ টাকা বেড়ে ১ লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়ায় ৮০ টাকা। তখন ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন মালিকেরা। একই দাবিতে লঞ্চ ধর্মঘট যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। সংকট নিরসনে সরকার ওই সময় বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাসে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা করে। আর যাত্রীবাহী নৌযানে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় ৩৬ শতাংশ। কিন্তু লঞ্চমালিকেরা সরকার নির্ধারিত ৩৬ শতাংশ ভাড়ার বদলে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি করে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর আগে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ডেকের যাত্রীদের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। বর্ধিত ভাড়ায় তা ৩৫০ করা হলেও ঈদ উপলক্ষে তা দাঁড়িয়েছে ৪০০ টাকা। প্রথম শ্রেণির এক শয্যার কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ৯০০ টাকা। গত নভেম্বরে তা ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়। এখন তা দেড় হাজার করা হয়েছে। দুই শয্যার ডাবল কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। পরে ২ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়। এবার হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
লঞ্চমালিকদের সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা নৌপথে সরাসরি ও ভায়া পথে অন্তত ২৭টি নৌযানে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ঈদের বিশেষ এই সার্ভিস। নৌযানগুলো ঈদের আগের তিন দিন ও পরের অন্তত চার দিন ডাবল ট্রিপেও যাত্রী পরিবহন করবে।
ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী একটি লঞ্চের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-বরিশাল নৌপথে তাঁদের লঞ্চটি আসা-যাওয়া (আপডাউন) করতে ৭ হাজার ৮০০ লিটার ডিজেল লাগে। আগের মূল্য অনুযায়ী এ পরিমাণ ডিজেলের ব্যয় হতো ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। বর্ধিত মূল্যে এ পরিমাণ ডিজেল কিনতে খরচ হচ্ছে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ফলে আগের চেয়ে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তাতে জ্বালানি ব্যয় বাবদ লঞ্চটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ। কিন্তু ওই সময়ই লঞ্চগুলোর ভাড়া বৃদ্ধির হার ছিল ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ। এরপরও ঈদকে পুঁজি করে আরেক দফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ রমজান থেকে এই পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অগ্রিম টিকিটের চাহিদাপত্র নিয়েছে। এরপর ২০ এপ্রিল থেকে এর অনুকূলে ঈদের আগে ও পরের ৫ দিন করে ১০ দিনের অগ্রিম টিকিট সরবরাহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সব কটি লঞ্চের আগাম টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কেবিন-সোফার কোনো টিকিট নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সময় এক দফা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে ভাড়া বাড়ানোটা নিপীড়ন ছাড়া কিছু নয়। দুই বছর করোনায় মানুষ ঈদের উৎসবে বাড়ি ফিরতে পারেনি। এবার স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি ফিরবে বিপুলসংখ্যক মানুষ। সেটাকে ব্যবসার পুঁজি করা হচ্ছে।
ভাড়া বাড়ানো প্রসঙ্গে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী ক্রিসেন্ট শিপিং লাইনসের (সুরভী) পরিচালক রেজিন-উল কবির রোববার দুপুরে বলেন, ‘আমরা কেবিনের ভাড়া (নন এসি-এসি) ২০০ টাকা করে বৃদ্ধি করেছি।…তবে এটা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই আছে। স্বাভাবিক সময়ে আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিই। ঈদের সময় লঞ্চের বাড়তি ব্যয় থাকে। এসব মেটানোর জন্যই এই সময় কিছুটা বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হয়।’
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগর যুগ্ম পরিচালক ও নদীবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে বর্ধিত ভাড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। এ বিষয়ে তাঁদের তদারকি কমিটি কাজ করছে।