রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনে নিউমার্কেট থানায় করা এসব মামলায় ১ হাজার ৪২৪ ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী ও ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিরা অজ্ঞাতপরিচয়।এদিকে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতের বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার নিউমার্কেটসহ ওই এলাকার সব মার্কেট খুলেছে। মিরপুর রোডে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিউমার্কেট থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী? মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হতে পারে। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা যেন শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করে। ’পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাফসান হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের যে ১০ দফা দাবি ছিল তার কিছু মানা হয়েছে। যেগুলো এখনো মানা হয়েনি সেগুলো দ্রুত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ’ঢাকা কলেজ শিক্ষক কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল কুদ্দুস শিকদার বলেন, ‘ছাত্ররা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের যেন হয়রানি না করা হয় সেজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। ’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের সব দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তাদের কিছু দাবি ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছেন। বাকি যেগুলো এখনো মানা হয়নি সেগুলো যাতে মানা হয় সেজন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব। ’খুলেছে মার্কেট : সংঘর্ষের ঘটনায় টানা দুদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলেছে রাজধানীর নিউমার্কেট। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার ও এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ দোকান ও শোরুম খোলা হয়েছে। তবে ক্রেতাসমাগম কম। রমজানের শুরু থেকে পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছিল, গতকাল সেরকম দেখা যায়নি। আগের মতো ফুটপাতে দোকান বসতেও দেখা যায়নি।
কয়েকজন দোকানি জানালেন, অর্ধেক দিন পার হয়েছে, এখনো তেমন কিছুই বিক্রি হয়নি। তারা আশা করছিলেন, সন্ধ্যার পর থেকে হয়তো ক্রেতার দেখা মিলবে। আর আজ শুক্রবার থেকে বেচাকেনা আগের অবস্থায় ফিরবে।
নিউমার্কেটের ভেতরের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। বন্ধ রাখা হয়েছে ৪ নম্বর ফটক। ২ নম্বর ফটকের পকেট গেট খুললেও বন্ধ মূল ফটক। যে দুটি দোকান ঘিরে সংঘর্ষের সূত্রপাত (ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড) সে দুটিও বন্ধ।
ক্রেতারা জানান, কিছুটা শঙ্কা নিয়েই এসেছেন তারা, যদি আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। অভিভাবকরাও আসতে দিতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বাভাবিক আছে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দোকান খুলতে পেরেছি। আর সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি চাই না। রাতেই আমরা উভয়পক্ষ একত্রে বসে একটি সমাধানে এসেছি। ’
যান চলাচল স্বাভাবিক : গতকাল সকালে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সব ধরনের যান চলাচলই স্বাভাবিক রয়েছে। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত উভয় রাস্তায়ই যান চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাস্তার দুপাশেই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে রাখা ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান।