অভিনেত্রী কস্তুরী চৌধুরী আর নেই

ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী কস্তুরী চৌধুরী। চিকিৎসকদের চেষ্টার কমতিও ছিল না। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আজ বুধবার দুপুরে তাঁর পৃথিবীর ভ্রমণ শেষ হয়েছে। চিকিৎসকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মেয়েকে জানান, কস্তুরী চৌধুরী মারা গেছেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
সংগীতা চৌধুরী বলেন, ‘মাসখানেক ধরে আম্মা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অবর্ণনীয় কষ্ট পেয়েছেন। শারীরিক অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়, গতকাল রাতে আম্মাকে ডায়ালাইসিস দেওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না। সকালের দিকে পরিস্থিতি জটিল হয়। দুপুরের দিকে চিকিৎসক এসে জানালেন, আম্মা আর নেই। তার আগে আরও দুটি হাসপাতালে তাঁকে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে।’

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার রাজারবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরে কস্তুরী চৌধুরীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কস্তুরী চৌধুরী পরিচালক রাশীদ পলাশের ‘ময়ূরাক্ষী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়িকা ববির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। হাটহাজারী স্কুলের সাবেক শিক্ষক কস্তুরী চৌধুরী ৭৬ বছর বয়সে এসে প্রথমবারের মতো কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশ উচ্ছ্বসিতও ছিলেন। পরিবারের সবার কাছে সেই উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছিলেনও। তিনি বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মীয়। ‘সুতরাং’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সুভাষ দত্ত তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

মাত্র তিন দিন শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে সেই চলচ্চিত্রে নিজের চরিত্রের পুরো কাজ শেষ করেন। সংগীতা চৌধুরীর জানান, তাঁর মা অনেক দিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২১ মার্চ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাঁকে মগবাজার এলাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শ্যামলীর আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

কস্তুরী চৌধুরীর মেয়ে সংগীতা চৌধুরীও অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র ‘মুজিব: দ্য মেকিং অব নেশন’ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এই চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর মা শেখ সায়েরা খাতুনের চরিত্রে। এই চলচ্চিত্রে তাঁর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সংগীতা চৌধুরী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আম্মা অভিনয় করতেন। তবে সেটা ছিল স্কুল-কলেজে। শিক্ষিকা মা আমাদের চার ভাইবোনকে মানুষ করতে পেশাদার অভিনয়ে নামই লেখাতে পারেননি। প্রথমবার কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পেরে মায়ের সে কী উচ্ছ্বাস! শিক্ষকতা থেকে মা অবসর নেওয়ার পর অনেকে তাঁকে নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রও বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসবও করতে পারেননি। অসুস্থ হওয়ার এক দিন আগেও বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল।’

Leave a Comment