মসলিন বিলুপ্ত প্রায় হয়ে যাবার কারণ কী ছিল?
তার আগে জেনে নিই, মসলিন কবে এসেছিল।
খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচশ অব্দ থেকেই পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষের কাছে মসলিনের বিশেষ কদর ছিল। কেবল মসলিনই নয়, ভারতের সুতি বস্ত্র ভারতের বাইরে রপ্তানি করা হত। তখন ভারতীয় মসলিন যে মিশরেও যথেষ্ট সমাদর পেত তার প্রমাণ মেলে মিশরের ফ্যারাও এর মৃতদেহ ভারতীয় মসলিন ব্যবহার করে মমি করা হয়েছিল, প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রীক দার্শনিক হেরোগেটাস এর প্রবন্ধে ভারতীয় মসলিন কথা বার বার উল্লেখ দেখা যায়।
মসলিন গুণগত মান পরীক্ষা করার একটি চমৎকার উপায়ও ছিল। হাতের আংটির ভেতর দিয়ে পুরো কাপড়টি যদি টেনে বের করে নেয়া যেত, তবেই সেটি উৎকৃষ্ট মসলিন বলে বিবেচিত হত।
আবার ওজন বিচারেও গুণাগুণ পরীক্ষা করা হত। এক গজ বহরের একটি পনের গজ দৈর্ঘের কাপড়ের ওজন হত মাত্র চর থেকে সাড়ে চার তোলা।
কথিত আছে, সতের শতাব্দীর পারস্যের এক রাজদূত, ভারতবর্ষ থেকে ত্রিশ গজ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি মসলিন নারকেলের খোলার মধ্যে করে পাগড়িরুপে তাঁর দেশের সম্রাটকে উপহার দিয়েছিলেন। পাগড়ি দেখে সম্রাট তো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন।
পর্যটক মার্কোপোলো তার ভারত ভ্রমণ বৃত্তান্তে বহুবার ঢাকার মসলিনের গুণকীর্তন করেছেন। গ্রীস দেশেও ভারতীয় মসলিন যথেষ্ট সমাদর পেত। তাদের কাছে এটি গ্যানজেটিক নামে পরিচিত ছিল। গ্রীস ছাড়াও মিশর, রোম, প্যালেস্টাইন, পারস্য, সুমাত্রা, জাভা, চীন প্রভৃতি দেশে ভারতীয় মসলিন নিয়মিত রপ্তানি করা হত। ব্যবসার দিক থেকে বিচার করলে, ভারতীয় মসলিন প্রচুর অর্থাগম ঘটাত আমাদের দেশে।
ইংরেজরা ভাবল, ভারতীয় মসলিন যেভাবে ইউরোপের বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে চলছে, তাতে তাদের দেশীয় বস্ত্র শিল্পের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা। তাই তারা আিন জারি করে ভারতীয় কাপড়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিলেন। তাঁতিদের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবার জোগাড় হল।
১৭০০ খ্রীস্টাব্দের ১১ই এপ্রিল এক আমদানি আইন জারি করে। তাতে বলা হয়, ১৯০১ এর ১৯ শে সেপ্টেম্বর থেকে সে আইন কার্যকর হয়। ভারতীয় বহু তাঁতীর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়ে বস্ত্রবয়ন শিল্পের ক্ষতি সাধন করে।
তথ্য সংগ্রহে ঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।