৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেও ঋণমুক্ত হতে পারেননি নাটোরের সিংড়ার কৃষক মরু প্রামাণিক (৬৫)। ঋণদাতা একমাত্র সম্বল বসতভিটা থেকে সপরিবারে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের পাঁড়েরা গ্রামের বাসিন্দা মরু প্রামাণিক। তিনি বলেন, সংসারের খরচ মেটানোর জন্য ৩ বছর আগে শাহীন শাহর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৬টি কিস্তিতে সুদে-আসলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও ঋণদাতার চাহিদা মেটেনি। আরও টাকা না পেয়ে শেষ সম্বল ভিটেমাটির কাগজপত্র লিখে নেন।
কথা দিয়েছিলেন কয়েক মাস পর ভিটেমাটির কাগজপত্র ফিরিয়ে দেবেন। তবে কথা রাখেননি। বরং বাড়িসহ ভিটেমাটি গ্রামের সুমন আলীর কাছে বিক্রি করে দেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন ও শাহীন শাহ এসে তাঁকেসহ তাঁর পরিবারের ১১ সদস্যকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির দখল হস্তান্তর করেন সুমন আলীর কাছে। নিরুপায় হয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। সারা রাত কেটে গেছে খোলা জায়গায়।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মরু প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি দখল করে দরবার বসিয়েছেন শাহীন শাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন। এর পাশে গ্রামের সর্বজনীন দুর্গা মন্দির। মন্দিরের সামনের ফাঁকা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন মরু প্রামাণিক ও পরিবারের সদস্যরা। খেতে না পেয়ে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। বড়রা শুধু তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
বুধবার বিকেলে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন ও শাহীন শাহ এসে মরু প্রামাণিকের পরিবারের ১১ সদস্যকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির দখল হস্তান্তর করেন সুমন আলীর কাছে।মরু প্রামাণিকের ছেলে শ্রী তরুণ প্রামাণিক বলেন, বাড়িটি ফিরে পেতে তাঁরা সিংড়ার সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন। আদালত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন ও তাঁর লোকজন। আদালতের আদেশও তাঁরা মানছেন না।
মরু প্রামাণিকের বাড়িতে দরবার বসিয়েছেন শাহীন শাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের সিংড়ার পাঁড়েরা গ্রামেমরু প্রামাণিকের বাড়িতে দরবার বসিয়েছেন শাহীন শাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের সিংড়ার পাঁড়েরা গ্রামে
জানতে চাইলে শাহীন শাহ দাবি করেন, তিনি সুদের কোনো কারবার করেন না। তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে ওই জায়গা কিনে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তাঁর নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সামাজিকভাবে তাঁদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকাছাড়া করার হুমকি–ধমকি দেওয়ার বিষয়টি ঠিক না।
স্থানীয় হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আল তৌফিক পরশ বলেন, ঘটনাটি চরম অমানবিক। পরিবারের নারী-শিশুদের কান্নাকাটিতে গ্রামবাসীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান বলেন, এ ধরনের কোনো অমানবিক ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি। সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।