বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, তারেক রহমান ভোটাধিকার ও রাষ্ট্র মেরামতে ‘জাতীয় সরকারের’ যে ফর্মুলা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, তা সব মহলে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
গয়েশ্বর রায় মনে করছেন, তাঁদের নেতার দেওয়া এই ফর্মুলা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি আনবে। একে তিনি ‘ট্রাম্পের ওপর ওভার ট্রাম্প’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন ও আলোচিত জাতীয় সরকার’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে। তারপরেও সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলেছে বিএনপি। তারেক রহমান ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত নয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন—এ কথা তো বলেননি। বলেননি কোয়ালিশন সরকার, তিনি বলেছেন জাতীয় সরকার। এই সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক ট্র্যাকে আনবে। তিনি বিএনপির নেতৃত্বে দেশটাকে গণতান্ত্রিক ট্রাকে আনতে চান, জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চান।নির্বাচনের আগে না কি পরে জাতীয় সরকার—এমন আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা কেউ কেউ বুঝতে না পারলেও সরকার ঠিকই বুঝতে পেরেছে। এ জন্য সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন যাঁরা নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের কথা বলে মাঠে নেমেছেন, তাঁদের ভাবতে হবে কোনটি সঠিক।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হলে তো সব দল নিয়ে হয়। আমার তো মনে হয় শেখ হাসিনাও এই জাতীয় সরকার মেনে নেবে। এটা শেখ হাসিনা মাঠে ছড়াচ্ছে কি না, তা-ও তো ভাবনার বিষয়। কারণ, এই সরকারের ১৪ বছরের অপকর্মের পর আবার যদি শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় সরকার হয়, তাহলে সে তো নোবেল পুরস্কার পাবে। সরকারের অতীতের সব অপকর্ম এই জাতীয় সরকার দিয়ে জায়েজ করে নেবে।’বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা ভোটের রাজ্যে বারবার প্রমাণ করেছে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এক কথায় তারা ‘প্রতারক’। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা লুটপাট করে অর্থনীতিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। উন্নয়নের কথা বলে ৭০ ভাগ টাকা তারা লুট করেছেন। যদি লুটপাট করে বিদেশে পাচার না করেন, তাহলে মাত্র ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলো কী করে? এই লুটপাটের কারণে এখন একের পর এক ভ্যাট, ট্যাক্স, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার। এতে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। অথচ মানুষের আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে।
এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আজকে জাতীয় সরকারের যে ঘোষণা এসেছে, এটি আসা উচিত ছিল ১৯৭১ সালে। কারণ, সে সময়ে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছে। তখন জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ বিনির্মাণ করলে আজ বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।’বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষিত নির্বাচন পরবর্তী ‘জাতীয় সরকারের’ ধারণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, আজ যারা দেশের ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের সংগ্রামে শামিল হয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করে বিজয়ী বা বিজিত হবেন, তাঁদের সবাইকে রাষ্ট্র বিনির্মাণে শামিল করা হবে।আবদুল করিম আব্বাসীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় দলের সভাপতি এহসান হুদা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ প্রমুখ।