কৌশলে অনাস্থা প্রস্তাব ঠেকিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নতুন নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণায় দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীর হয়েছে। এমন পদক্ষেপকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে চ্যালেঞ্জ করেছে বিরোধী জোট। তারা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে টুইটারেও সমালোচনায় সরব হয়েছেন পাকিস্তানিরা। অনেকে বলছেন, নিজেকে রক্ষায় বিব্রতকর পথে হেঁটেছেন ক্যাপ্টেন। কেউ বলছেন, ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার দাবি করা ইমরান আজ মাঠ ছেড়ে পালালেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, ইমরান পাকিস্তানের পুতিন ও সি চিন পিং হতে চান। খবর ট্রিবিউনের।
গতকাল রোববার জাতীয় পরিষদে ইমরানের ভাগ্যনির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে নজর ছিল পাকিস্তানিদের। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি শরিক দল বের হয়ে গেলে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীরা।অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
অনাস্থা ভোটের দিন জাতিকে ‘সারপ্রাইজ’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ইমরান খান। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। তিনি এমনটা বলেছিলেন, কারণ তখনো তাঁর হাতে একটা কৌশল অবশিষ্ট ছিল। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অধিবেশন চলাকালে তাঁর সেই ‘অঙ্গীকার’ সামনে আসে।সরকার ও বিরোধী দলের চূড়ান্ত এই শোডাউনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও এ নিয়ে সরগরম ছিল। জাতীয় পরিষদের এমন ঘটনা অনেকেই সমর্থন করতে পারেননি। কেউ আবার ইমরান খান অনাস্থা ভোট এড়ানোয় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানে টুইটারে হাশট্যাগ #বিহাইন্ডইউস্কিপার (আপনার সঙ্গে আছি দলনেতা) ট্রেন্ডিং ছিল গতকাল।
নাজির লেগারি টুইটারে লিখেছেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দিনটিতে নিজেকে রক্ষায় বিব্রতকর পথে হেঁটেছেন ক্যাপ্টেন।’ দেশটির প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর লিখেছেন, ‘সব সময় তিনি ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার দাবি করতেন। কিন্তু আজ তিনি স্টাম্প তুলে নিলেন এবং মাঠ ছেড়ে পালালেন। আম্পায়াররা হতবাক।’কামরান ইউসফ নামের একজন টুইট করেছেন, ‘ইমরান খান পাকিস্তানের আজীবনের পুতিন ও সি চিন পিং হতে চান।’ সালার খান নামের একজন লিখেছেন, ‘একদিকে আপনি বিস্মিত হবেন আমরা কীভাবে এ পর্যায়ে এসে পড়লাম, অন্যদিকে আপনি দেখবেন কীভাবে পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক লোকগুলো নিজেদের সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’
মোয়িদ পিরজাদা নামের একজন লিখেছেন, ‘ইমরান খানের বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। তিনি অবশেষে বুঝতে পেরেছেন—তুমি যদি রোমে থাকো, রোমানদের মতো আচরণ করো। সিআইএ তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কীভাবে সাজায়, তা দেখতে বিস্ময়ের সঙ্গে অপেক্ষায় আছি। সর্বোপরি পাকিস্তানে নির্বাচন সব সময়ই সাজানো।’পারভেজ খাট্টাক লিখেছেন, ‘সারপ্রাইজ কি উপভোগ করছেন!’ মেহর তারার লিখেছেন, ‘কখনো ইমরান খানকে খাটো করে দেখবেন না, কখনোই না।’
অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব গতকাল ডেপুটি স্পিকার নাকচ করে দেন। উল্টো স্পিকারের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা দিয়ে আদালতে গেছে বিরোধীরা। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার কথা জানিয়েছেন।