গরিবের ডাক্তার আহমেদ মাহী বুলবুল গতকাল রবিবার সকালে ঢাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন।
আজ সোমবার ভোরের দিকে তার লাশ রংপুরের ভগিবালাপাড়ায় নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাদ জোহর ভগিবালাপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে স্থানীয় রামপুরা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মরদেহ দাফনের আগে সোমবার দুপুরে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে নিহত বুলবুলের বাড়ির সামনে স্কুলের ৭৭ ব্যাচের বন্ধুরা ও শোকার্ত পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বুলবুলের খুনের সুষ্ঠু তদন্ত, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মৌখিকভাবে জানানো হয়, বুলবুলের ফোনের কললিস্ট অনুসন্ধান করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। প্রশাসন একটু খতিয়ে দেখলে আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বুলবুল ঠিকাদারির কাজ করতেন। নোয়াখালীতে একটি বড় ঠিকাদারির কাজের জন্য বুলবুল ভোরে বাড়ি থেকে বের হন। দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই সেটি জানত। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন নিহত বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আখতার, মামা আমিনুল ইসলাম ও বন্ধু আল আমিন।
বুলবুলের স্ত্রী শোকে কাতর হলেও পরিবারের সন্তানদের নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘এখন আমার কী হবে? সন্তানদের পড়াশোনাসহ পরিবার চলবে কীভাবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি (স্বামী)। ভোরে বাড়ি থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পর খবর আসে, তিনি খুন হয়েছেন। এটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সরকারের কাছে এটাই আমার আকুতি।’
পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ। তিনি সেনাসদস্য ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৯ সালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। এর বাইরে তিনি কয়েক বছর থেকে ঠিকাদারির কাজ করতেন।
চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল দিনাজপুরে বিয়ে করেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার আট বছরের মেয়ে আহমেদ আফনা নাউন ও সামি নামে দেড় বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে।