হাঁস-মুরগির ডিম যে গোলাকার, সেটা আমাদের কাছে বিশেষ কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না। পুরোপুরি গোল নয়, বলা যায়, প্রায় উপবৃত্তাকার। এর এক দিক একটু চোখা, অন্য দিক রান্নার হাঁড়ি-পাতিলের নিচের দিকের মতো বেশ সমন্বিত গোল। ভালো করে লক্ষ করলে দেখব, ডিমের আকৃতির মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য দরকার। এর আকৃতির কারণে সহজে ডিম পাড়া যায় এবং ডিম পাড়ার পর কোনো সমতল স্থানে বেশি দূর গড়িয়ে যেতে পারে না। আকারে ততটুকুই বড়, যতটুকু ভ্রূণের বিকাশের জন্য দরকার। আবার বলা যায়, আকারে ছোটই, যতটুকু হলে সহজে বাচ্চা ফোটানো যায়। শুধু তা-ই নয়, ডিমের এ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আকৃতি আমরা বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে অনেক সুফল পেতে পারি।
মূল বৈশিষ্ট্য কী
একটা মুরগি কয়েকটি ডিমের ওপর দিনের পর দিন বসে তার নিজের দেহের উষ্ণতা দেয়, যাকে আমরা চলতি ভাষায় বলি ‘ডিমে তা’ দেওয়া। ডিমের খোসায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে। এ জন্য তা দেওয়ার সময় মা মুরগির ওজনের চাপে ডিম ফেটে যায় না। আবার ডিমের ভেতর বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সময় খোসার ভেতরের দিকের ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান বাচ্চার পুষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই জন্মের পর মুরগির ছানা সহজেই খোসা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে। এখানে ডিমের বিশেষ আকৃতিরও একটি ভূমিকা থাকে। ডিমের আকৃতি এমন যে এর ওপর মা মুরগি হালকাভাবে বসলে ডিমের আবরণ ফেটে যায় না। আকৃতি প্রায় উপবৃত্তাকার হওয়ায় এর ওপর চাপ ডিমের উপরিতল ঘেঁষে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিচ থেকে সৃষ্ট চাপের বিশ্লিষ্টাংশকে নিষ্ক্রিয় করে। ডিমের খোসা অক্ষত থাকে।
নিরাপদে বাচ্চা জন্মের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ নিশ্চিত হয়। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে ডিমের ভেতরে বাচ্চা জন্ম নিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে। সদ্যোজাত বাচ্চা ভেতর থেকে বাইরের দিকে সামান্য ঠোকর দিলে ডিমের খোলস ফেটে যায়। কারণ, ভেতর থেকে বাইরের দিকে কোনো চাপ ডিমের খোলস নিষ্ক্রিয় করতে পারে না। তাই সহজে বাচ্চা উপযুক্ত সময়ে ডিম থেকে বেরিয়ে আসে। একইভাবে অন্যান্য পাখির প্রায় গোলাকার ডিম তাদের বংশ বিস্তারে সাহায্য করে। প্রাণিজগতে টিকে থাকার জন্য সহায়ক গুণাবলি সংরক্ষিত হয়। যদি হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডিম এ রকম প্রায় উপবৃত্তাকার না হতো, তাহলে হয়তো ধীরে ধীরে এসব পাখি বিলুপ্ত হতো। হাঁস-মুরগিও হয়তো থাকত না। আমরাও মজার ডিম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতাম!
বিজ্ঞানীদের গবেষণা কী বলে
ডিমের বিশেষ আকৃতির চাপ–সহনীয় সক্ষমতা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁদের গবেষণায় জানা গেছে, আমাদের বাস্তব জীবনে স্থাপত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এ আকৃতি কাজে লাগাতে পারি। এ বিষয়ে সম্প্রতি ফিসলিংক ডটকমে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ডিমের আকৃতি–সম্পর্কিত সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি সর্বজনীন গাণিতিক সূত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আজকাল প্রকৌশল ও স্থাপত্য, কৃষি, জীববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে এই গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয়ে নিউইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্সেসে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। লন্ডন সিটি হলের ডিম্বাকৃতির ছাদের জ্যামিতিক আকার লক্ষণীয়। এ ধরনের স্থাপত্য আরও অনেক নির্মাণকাজে দেখা যায়। সেগুলো সাধারণ গোলাকার স্থাপনার চেয়ে বেশি মজবুত।ডিমের আকার নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডিমের আকার আরও অনেক কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি।