নীলফামারীর ডোমারে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্যারেড ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে রাজাকারের সন্তান আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে উপজেলা প্রশাসন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বর্জন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরে সাবেক কমান্ডার নূর নবী, সাবেক কমান্ডার আব্দুল জব্বার, সাবেক পৌর কমান্ডার ইলিয়াছ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা অনুষ্ঠান বর্জন করে মাঠ ত্যাগ করে চলে যান।
ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুন্নবী অভিযোগ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর সন্তানের দ্বারা শহীদদের রক্ত আর মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন আমরা মেনে নেব না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছি, রাজাকারপুত্র তোফায়েলকে অপসারণ করতে হবে।
সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রব্বানী জানান, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা যুদ্ধাপরাধীর সন্তান উত্তোলন করবে, এটা দুঃখজনক। সে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাকে দ্রুত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ করা হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আসাদুজ্জামান চয়ন বলেন, আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। তার বাবা, নানা ও দাদা রাজাকার ছিলেন। তার হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা সুরক্ষিত নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করলাম। এছাড়া তার দ্বারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধ স্বপক্ষের শক্তি অবস্থান গ্রহণ করবে। পরবর্তীতে আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. আল-আমিন রহমান জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি সব সময়ই আমাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অপমান করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধ স্বপক্ষের শক্তিকে সব সময় তিনি প্রতিহত করার অপচেষ্টা করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, তার চেয়ারম্যান পদ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায় থেকে অপসারণ করা হোক।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, সাবেক কমান্ডার নুরুন্নবী উপজেলা নির্বাচনে আমার সঙ্গে পরাজিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনব এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।এর আগেও ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের জন্য তোফায়েল আহমেদের নাম ঘোষণা করায় সে অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।