‘দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যারা দিয়েছে তাদেরই দায়িত্ব গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা প্রমাণ করা। পাইকারি গ্যাসের একক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দিয়েছে তা যৌক্তিকতা, ন্যায্যতা ও বাস্তবতার নিরিখে সন্তোষজনক নয়। যদি দেখি দাম বৃদ্ধির কোনো বিকল্প রয়েছে তাহলে সেটাই গ্রহণ করা হবে’
বৃহস্পতিবার গণশুনানিতে এসব মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গত রবিবার থেকে গণশুনানি শুরু হয়েছিল, বৃহস্পতিবার ছিল শেষদিন।
বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী ও সিলেটে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মার্জিন বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এ দুটি কোম্পানির মার্জিন বাতিলের সুপারিশ করে। কমিটি ভোক্তা পর্যায় গ্যাসের ২০ ভাগ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, প্রস্তাবটি ন্যায্য ও যৌক্তিক পর্যায়ে নেয়ার জন্য পোস্ট শুনানিতে বিশ্লেষণ করা হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। যদি দেখি আন্তর্জাতিকভাবে কোনো বিকল্প রয়েছে তাহলে সেটা গ্রহণ করা হবে। যদি দেখি কোনো বিকল্প নেই তখন যেটুকু না বাড়ালে নয়, যাতে ভোক্তার কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
ধীর গতিতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো যেভাবে কাজ করছে তাতে অনেক বছর লেগে যাবে। সরকার নীতিমালা করে দিয়েছে খোলা মার্কেট থেকে কেনার জন্য। আল্লাহর ওয়াস্তে উন্মুক্ত করে দেন, গ্রাহকরা নিজে কিনে নিবে।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। দুটি কোম্পানিই অভিন্ন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানি দুটির প্রস্তাবে গ্রাহক পর্যায়ে ১১৭ শতাংশ দাম এবং প্রতি ঘনমিটারে বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।
তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন গ্রাহক পর্যায়ে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং প্রতি ঘনমিটারে বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
পেট্রোবাংলা গ্যাসের একক পাইকারি বিক্রেতা ও ক্রেতা। দেশের খনিগুলো থেকে উৎপাদিত গ্যাস ছাড়াও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিদেশ থেকে আমদানি করে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার পাইকারি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে থাকে বিইআরসি। এরপর পেট্রোবাংলার গ্যাস সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল)। জিটিসিএল, তিতাসসহ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছে গ্যাস পৌঁছে দেয়।
ইতিমধ্যে বিইআরসি পেট্রোবাংলার পাইকারি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করেছে। তারা জিটিসিএলের সঞ্চালন মাশুলের ওপরও গণশুনানি করেছে। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে, পেট্রোবাংলার প্রতি ঘন মিটার পাইকারি গ্যাসে ৩ টাকা ১১ পয়সা বাড়ানো যেতে পারে। এতে প্রতি ঘন মিটার পাইকারি গ্যাসের দাম হবে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। আর জিটিসিএলের সঞ্চালন মাশুল শূন্য দশমিক ছয় ভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
এবারের গণশুনানিতে তিতাস গ্যাসসহ দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মার্জিন বাতিলের সুপারিশ করেছে বিইআরসি। গণশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আদেশ দিতে হবে বিইআরসিকে। দাম বাড়ুক অথবা অপরিবর্তিত থাকুক তা এই ৯০ দিনের মধ্যে বিইআরসিকে জানাতে হবে।
শেষ দিনের শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ও সিলেটে অঞ্চলের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের কর্মকর্তারা।