বিপদে শ্রীলঙ্কা। চলছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। তেল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। আজ রোববার দেশটির পুলিশ এ কথা বলেছে। খবর রয়টার্সেরকলম্বোয় পুলিশের মুখপাত্র নলিন থালদুয়া বলেন, তেল কিনতে গিয়ে যে দুজন মারা গেছেন, তাঁদের বয়স সত্তরের কোটায়। দুটি ভিন্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা পেট্রল ও কেরোসিন কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
শ্রীলঙ্কায় কয়েক সপ্তাহ ধরে তেলের পাম্পের সামনে লম্বা লাইনে মানুষকে দাঁড়াতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত জ্বালানি তেল। দেশটির অনেক এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ বলছে, তেলের জন্য লাইনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছর। তিনি তিন চাকার অটোরিকশার চালক ছিলেন। ভুগছিলেন ডায়াবেটিসে। তাঁর হৃদ্যন্ত্রে সমস্যাও ছিল। আরেকজনের বয়স ছিল ৭২ বছর। তাঁরা জ্বালানি তেলের জন্য চার ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শ্রীলঙ্কার পেট্রোলিয়াম জেনারেল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি অশোকা রানওয়ালা বলেছেন, অপরিশোধিত তেলের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশটির একমাত্র জ্বালানি শোধনাগার কার্যক্রম স্থগিত করেছে।এ বিষয়ে অবশ্য দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।দেশটিতে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষজনের মধ্যে কেরোসিনের ব্যবহার বেড়েছে। গতকাল দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী লাফ গ্যাসের সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৯ রুপি (৪ দশমিক ৯৪ মার্কিন ডলার)। প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
গত জানুয়ারি মাস থেকে ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানিতে ডলার সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির রিজার্ভ ২৩১ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে গেছে। গত মাসে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ১৫ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে গত শনিবার গুঁড়া দুধের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট ২৫০ রুপি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সেখানে এক কাপ চায়ের দামও গিয়ে ঠেকেছে ১০০ রুপিতে।বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাগজও। ফলে পরীক্ষায় বসতে পারছে না দেশটির স্কুলপড়ুয়া লাখ লাখ শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোমবার শুরু হয়ে স্কুলগুলোতে এক সপ্তাহ সাময়িকী পরীক্ষা চলার কথা ছিল। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৪৫ লাখ স্কুলশিক্ষার্থী রয়েছে। তবে কাগজের অভাবে তাদের তিন ভাগের দুই ভাগই পরীক্ষা দিতে পারবে না।শ্রীলঙ্কার ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে প্রয়োজনীয় কাগজ ও কালি আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে স্কুলের অধ্যক্ষরা পরীক্ষা নিতে পারছেন না। অর্থসংকটের জেরে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কমে এসেছে দেশটির খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মজুত। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে কলম্বো। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
চলতি বছরে শ্রীলঙ্কাকে ৬৯০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির হাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২৩০ কোটি ডলার। সংকট মোকাবিলায় বছরের শুরুতে চীনের কাছে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে সহায়তা চায় শ্রীলঙ্কা। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি বেইজিং।