নীলফামারীর সৈয়দপুরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মাণাধীন স্মৃতিসৌধের অর্ধেক কাজ অর্থাভাবে সাত বছর ধরে আটকে আছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে শহরের শহীদ মীঢ়ধা ক্যাপ্টেন হুদা সড়কের পাশে এর কাজ শুরু হয়। এক বছর চলার পর অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর শুরু করা যায়নি স্মৃতিসৌধের বাকি অংশের নির্মাণকাজ। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও শহীদ পরিবারের সদস্য রাবেয়া আলীম বলেন, সৈয়দপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণকাজটি সম্পন্ন করতে একটি বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দপুরের বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ১০১ সদস্যের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক সাংসদ আলিম উদ্দিনকে সভাপতি ও সাখাওয়াৎ হোসেন খোকনকে এর সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ওই বছরের এপ্রিলে কমিটির উদ্যোগে এ স্মৃতিসৌধ ও গোলাহাট বধ্যভূমি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে গোলারহাট বধ্যভূমির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল শহরের শহীদ মীঢ়ধা ক্যাপ্টেন হুদা সড়কের পাশে রেলওয়ের পরিত্যক্ত দুই একর জমিতে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ জন্য তৎকালীন সাংসদ শওকত চৌধুরীর কাছ থেকে কিছু টাকা অনুদান পেয়েছিলাম। জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া হয়েছিল তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া কমিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ওই সময় প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এক বছর কাজ চলার পর তাঁরা আর কোনো অর্থসহায়তা পাননি। এখনো বাকি আছে প্রায় অর্ধেক কাজ, যা সম্পন্ন করতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটি সূত্র জানায়, ১২ এপ্রিল প্রতিবছর সৈয়দপুরে স্থানীয়ভাবে শহীদ দিবস পালিত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিন সৈয়দপুরের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের রংপুর সেনানিবাসের কাছে নিসবেতগঞ্জে নিয়ে গিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এর আগে একাত্তরের ২৬ মার্চ তাঁদের বন্দী করে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের আর্মি কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়।আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধ এলাকার জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে গড়ে উঠছে অবৈধ বস্তি। এর আশপাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এ সময় কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা সালাহউদ্দিন বেগের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এ স্মৃতিসৌধ আমাদের অস্তিত্বের জায়গা। অথচ সাত বছর ধরে ঝুলে আছে এর নির্মাণকাজ। এসব দেখার কি কেউ নেই?’
প্রজন্ম ’৭১ সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন বলেন, ‘স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে কেন বিলম্ব হচ্ছে, আমি বুঝি না। এর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে, আশপাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে, যা দেখে শহীদ পরিবারের সদস্যরা কষ্ট পান।’এ বিষয়ে কথা হয় সৈয়দপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হুসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের হটিয়ে তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে।