কৃষ্ণসাগরে প্রায় ২০০ খাদ্য-শস্যের জাহাজ আটকে রেখেছে রাশিয়া। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এমন চলতে থাকলে খাদ্যসংকট শুরু হবে বিশ্বের বহু দেশে। এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে।রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশই ইউরোপ এবং আফ্রিকায় প্রচুর পরিমাণে গম রপ্তানি করে। পরিসংখ্যান বলছে, বছরে রাশিয়া প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন গম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। ইউক্রেন করে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন টন। এবছর তা করতে দিচ্ছে না রাশিয়া। কৃষ্ণসাগরে সমস্ত দানাশস্য বোঝাই জাহাজ আটকে রেখে দিয়েছে তারা।
পানামার পতাকা লাগানো দুইটি জাহাজ ব্লকেড ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করলে রাশিয়ার নেভি তার উপর গুলি চালায় বলে অভিযোগ। রাশিয়ার গোলায় বাংলাদেশের একটি জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল এক নাবিকের।রাশিয়া অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ইউক্রেনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনের নৌবাহিনী সমুদ্রে মাইন বিছিয়ে রেখেছে। জাহাজ চলাচল করলে যে কোনো সময় দুরঘটনা ঘটতে পারে। সে কারণেই তারা জাহাজগুলোকে আটকে রেখেছে।
জার্মানির সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী সংস্থা বেওয়া জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের বন্দর থেকে এক বিন্দু দানাশস্যও রপ্তানি করা যায়নি। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইউরোপ জুড়ে খাদ্যসংকট শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই খাবারের দাম বাড়তে শুরু করেছে।ইউরোপের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রাশিয়া দানাশস্য এবং সার রপ্তানি করে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, রাশিয়া এবার তা রপ্তানি নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে খাদ্যসংকট আরো তীব্র হবে।
লড়াই শুরু হওয়ার পরেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চাষিদের বলেছিলেন, যেখানে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত, সেখানে যেন চাষিরা ভুট্টার চাষ শুরু করেন। এটাই ভুট্টা চাষের সময়। কিন্তু যেভাবে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করেছে, তাতে চাষিরা ভুট্টার বীজ রোপন খুব একটা করে উঠতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে না।ইউরোপের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতেও খাবারের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বহু দেশই ইউরোপের রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া রাশিয়া জাহাজ আটকে রাখায় দানাশস্য যাতায়াতের চেইনটি ভেঙে গেছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষ্ণসাগরের ওই রুটটিকে বিশ্বের ব্রেড বাস্কেট বলা হয়।