উত্তরাঞ্চলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৪৩ জন শিক্ষককে বান্দরবান, রাঙামাটিসহ দূরবর্তী এলাকায় বদলির আদেশ বাতিল করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আজ বুধবার মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে উত্তরাঞ্চলের ১৪৩ শিক্ষকসহ সারা দেশের ৪৮৩ জন শিক্ষককে বদলির প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।বদলির আদেশ বাতিল হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৪৩ জনসহ সারা দেশের ৪৮৩ শিক্ষক আগের কর্মস্থলেই বহাল থাকবেন। ৮ মার্চ মাউশি মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ওই শিক্ষকদের দেশের দুর্গম বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছিল। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, নতুন শিক্ষকদের সুবিধা দিতে ওই শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। বদলির প্রতিবাদে রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনও করে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে গত সোমবার ‘উত্তরাঞ্চলের শিক্ষকদের ওপর মাউশির “খড়্গ”’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
বদলির আদেশ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী বলেন, ৮ মার্চ মাউশির মহাপরিচালকের জারি করা পরিপত্রে তাঁর বিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষককে দুর্গম এলাকায় বদলি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে শিক্ষকেরা স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন কর্মস্থলে যোগদানও করেছেন। আগের পরিপত্র বাতিল করে আজ আরেকটি আদেশ জারি করায় যেসব শিক্ষককে বদলি করা হয়েছিল, তাঁরা নিজ নিজ কর্মস্থলে বহাল থাকবেন। এতে যেসব শিক্ষক ছাড়পত্র নিয়েছেন, তাঁদের ছাড়পত্র বাতিল হবে। এ ছাড়া যাঁরা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন, তাঁদের যোগদানও বাতিল হবে।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২ হাজার ৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৯৯৪ সালের পরিপত্রে উল্লেখ ছিল, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের প্রথমে উপজেলা বা থানা পর্যায়ে নিয়োগ দিতে হবে। এরপর জেলায় নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে পুরোনো ও বিভাগীয় শহরেও নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ওই পরিপত্র না মেনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষককে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নামীদামি স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ফলে অনেক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত পদের চেয়ে জনবল বেশি হয়ে যায়। ‘সহজ সমাধান’ হিসেবে মাউশি উত্তরাঞ্চলের ১৪৩ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ঢালাওভাবে দুর্গম এলাকায় বদলি করে।
জানা গেছে, ৪৮৩ শিক্ষকের মধ্যে ২৬১ শিক্ষককে এক অঞ্চল (মাউশির অধীন মোট ৯টি অঞ্চল) থেকে আরেক অঞ্চলে বদলি করে মাউশি। তাঁদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪৩ জন শিক্ষককে বান্দরবান, রাঙামাটি, ভোলা, হাতিয়া, বরগুনাসহ দূরে বদলি করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৩৪ জনকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বদলি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষকও আছেন, যাঁদের অবসরের বয়স দু–এক বছর বাকি। এ ছাড়া ২৪ জনকে ভোলা, ১০ জনকে রাঙামাটি, ১৩ জনকে বরগুনায়, ১০ জনকে নোয়াখালীতে (কয়েকজন হাতিয়ায়) বদলি করা হয়। বাকি শিক্ষকদের চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শরীয়তপুর, পিরোজপুরসহ কয়েকটি জেলায় বদলি করা হয়।বগুড়া জিলা স্কুলের চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফোদ্দৌলাকে ভোলায় বদলি করা হয়েছিল। বদলির আদেশ বাতিল হওয়ায় খুশি এই শিক্ষক বলেন, ‘নিজের জেলা জামালপুর হলেও শুরু থেকেই অন্য অঞ্চলে চাকরি করেছি। উচ্চ রক্তচাপসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। বগুড়া থেকে ভোলায় বদলি করায় খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। আদেশ বাতিল হওয়ায় এখন স্বস্তি লাগছে।’