আদালতের বাইরে ধর্ষণের ঘটনা আপসরফা করতে এক কিশোরীর মাকে ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কিশোরীর মা প্রশ্ন রেখেছেন, মেয়ের ধর্ষণের মূল্য কি ৯০ হাজার টাকা! সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে।গত বছরের ২৬ মে রাতে জেলার কসবা উপজেলায় এক কিশোরী (১৪) ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে কসবা থানায় মামলা করেন।
‘সাইফুল ও তাঁর লোকজন মামলা তুলে নিতে আমাকে চাপ ও হুমকি দিচ্ছিল। চলতি মাসের ৫ মার্চ সাবেক ইউপি সদস্য মোর্শেদ মিয়া তাঁর বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা করতে ৯০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেন। তখন আমি কৌশলগত কারণে “হ্যাঁ” বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আমার মেয়ে সম্পর্কে বাজে কথা বলছিলেন। তখন আদালতকে ওই কথা বলেছি।’কিশোরীর মা
মামলার এজাহার, পুলিশ ও কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সাইফুল মিয়া (২৮) মুঠোফোনে প্রায়ই কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করতেন। গত বছরের ২৬ মে খালার বাড়িতে বেড়াতে যায় ওই কিশোরী। রাত ১০টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে সাইফুল তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে কিশোরীর মুখ চেপে ধরেন। কিশোরীকে জোর করে অটোরিকশায় তুলে একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে উপজেলার গোসাইস্থল বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা কিশোরীকে উদ্ধার করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য হরমুজ মিয়ার জিম্মায় কিশোরীকে দেওয়া হয়। পরদিন ২৭ মে কিশোরীর মা বাদী হয়ে সাইফুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ইফতেখার হোসেন মুন্সী গত বছরের ২৬ আগস্ট সাইফুল ও তাঁর দুই সহযোগী খোকন মিয়া (৩৫) ও শামিম মিয়াকে (৩২) আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
জানা গেছে, মামলার প্রধান আসামি সাইফুল সাত মাস পলাতক থাকার পর ৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন মামলার বাদী কিশোরীর মা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আমার মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা তারা ধামাচাপা দিতে চাইছে। ধর্ষণের মূল্য ৯০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আমার ব্যাগে এই টাকা আছে। আমি টাকা চাই না, ধর্ষণের বিচার চাই।’ পরে কিশোরীর মা আদালত থেকে বের হয়ে সেই টাকা আসামিপক্ষের কাছে ফেরত দেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি সাইফুলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
‘অনেক দিন ধরেই দুই পক্ষকে নিয়ে সালিস করছি। ৫ মার্চ ঘটনাটি ৯০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। তখন কিশোরীর মাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ৭ মার্চ আদালত প্রাঙ্গণে বাকি ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু এজলাসে গিয়ে কিশোরীর মা উল্টে যান। তিনি এজলাস থেকে বের হয়ে ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।’কিশোরীর মা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘সাইফুল ও তাঁর লোকজন মামলা তুলে নিতে আমাকে চাপ ও হুমকি দিচ্ছিল। চলতি মাসের ৫ মার্চ সাবেক ইউপি সদস্য মোর্শেদ মিয়া তাঁর বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা করতে ৯০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেন। তখন আমি কৌশলগত কারণে “হ্যাঁ” বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আমার মেয়ে সম্পর্কে বাজে কথা বলছিলেন। তখন আদালতকে ওই কথা বলেছি।’
সাবেক ইউপি সদস্য মোর্শেদ মিয়া বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই দুই পক্ষকে নিয়ে সালিস করছি। ৫ মার্চ ঘটনাটি ৯০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। তখন কিশোরীর মাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ৭ মার্চ আদালত প্রাঙ্গণে বাকি ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু এজলাসে গিয়ে কিশোরীর মা উল্টে যান। তিনি এজলাস থেকে বের হয়ে ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।’বাদীপক্ষের আইনজীবী ফেরদৌস ভূইয়া বলেন, ধর্ষণ মামলা আপসযোগ্য নয়। বাদী অভিযোগ করলে ওই সব মাতবরকে আদালতে হাজির হতে হবে।