কুমিল্লায় দুই ট্রেনের মাঝখানে কাটা পড়ে তাসফিয়া, মীম এবং রীমা নামের তিন স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছেন। এই তিন সহপাঠী ছিলেন জিগারে দোস্ত। তাদের মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া।
বুধবার দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল তাদের ছিন্নভিন্ন মরদেহ, স্কুল ব্যাগ, জুতা এবং টিফিনবক্স। তারা তিনজনেই বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে আশপাশের এলাকার লোকজন আসছেন। এ ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। এতে রেলওয়ের গাফিলতি রয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
এলাকাবাসী ও জড়ো হওয়া বিক্ষুব্ধ, শোকস্তব্ধ লোকজনের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় রেলওয়ের কোনো গাফিলতি নেই, ছাত্রীদের অসতর্কতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, ওরা তিনজনই লেখা-পড়ায় ছিল খুবই মনোযোগী, সব সময় মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছে। তাদের এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
সরেজমিনে, নিহত মীম, রিমা এবং তাসফিয়ার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কেউ কেউ শোকে পাথর। কথা বলতে পারছেন না। তাদের শোক যেন সংক্রমিত করেছে উপস্থিত সকলকে।
মীম এবং রীমা দুর্গাপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তাসফিয়া থাকতেন মামার বাড়িতে। তাসফিয়ার পৈতৃক বাড়ি বরুড়া উপজেলার অর্জুতলা গ্রামে। অর্জুতলা থেকে এসেছেন অনেকে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিজয়পুর ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায়ও স্বজন-এলাকাবাসীর কান্নায় হৃদয়বিদারক থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। দূর-দুরান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিত হাজারো মুসল্লি জানাজায় অংশ নেন। তারা নিহতদের পরিবারকে শোক ও সমবেদনা জানান।
নিহত মীম এবং রিমাকে দুর্গাপুর গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। আর তাসফিয়ার লাশ পাশের বরুড়া পৌর এলাকার অর্জুনতলা দাফন করা হয়।
নিহত মীমের বাবা মো. মাসুম বলেন, ‘আমার মেয়ে ছিল একেবারেই শান্ত প্রকৃতির, আমি আমার ঘরের লক্ষ্মী হারিয়ে ফেলেছি, সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে ব্যাগে টিফিন দিয়েছি, আমার লক্ষ্মী যে এভাবে হারিয়ে যাবে কখনো ভাবিনি।’
রীমা আক্তারের বাবা রিপন মিয়া বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার মেয়ে আমাকে সকল কাজে সহযোগিতা করত, ওরা তিনজন একসঙ্গে থাকত, খেলত, স্কুলে যেত। সব শেষ হয়ে গেল।
তাসফিয়ার মা রোজিনা আক্তার বলেন, এমন করুণ মৃত্যু কখনো আশা করিনি, আমি কীভাবে বাঁচব, ঘাতক ট্রেন আমার মেয়ের জীবন কেড়ে নিলো, আমি ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।
এ সময় তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে যায়।