সময় যত গড়াচ্ছে ইউক্রেনের রাজধানীর উপর রাশিয়ার পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আশঙ্কাও ততই বাড়ছে। ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিলেও কিয়েভ এবং খারকিভ এখনও দখল করতে পারেনি রুশ সেনারা। লড়াইয়ের গতি যখন বাড়তে শুরু করেছে, ঠিক সে সময়ই একটি রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তার বরাতে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুদ্ধ এড়াতে রুশ সেনারা নাকি তাদের সামরিক যানগুলো নিজেরাই ধ্বংস করে দিচ্ছে!
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, এক রুশ সেনা তার মাকে ফোন করে জানাচ্ছেন যে, সাধারণ নাগরিককেও বাধ্য হয়ে গুলি করতে হচ্ছে। সেই সেনার মতো বাকি সেনারাও মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধে যে সব রুশ সেনাদের পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে কমবয়সীদের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, সেই সব রুশ সেনারা পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নন। তারা ভাল ভাবে প্রশিক্ষিতও নন। তা ছাড়া খাবার, জ্বালানি-সহ একাধিক জিনিসের অভাব সেই সব কমবয়সী সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। আর সে কারণেই যুদ্ধ এড়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবে তারা তাদের সঙ্গে থাকা সামরিক যানগুলো ধ্বংস করতে শুরু করেছে।
কিয়েভ দখলের জন্য ৬৪ কিলোমিটার (৪০ মাইল) দীর্ঘ সেনা বহরের গতি সেই কারণেই শ্লথ হয়ে যাচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
তবে, ইউক্রেন সেনার হাতে বন্দি রুশ সেনাদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই এই দাবি করা হচ্ছে। ওদিকে, ব্রিটেনের একটি গোয়েন্দা সংস্থা একটি রেডিও বার্তা প্রকাশ করেছে যা নিউ ইয়র্ক টাইমস এর সেই দাবিকেই সমর্থন করছে। রেডিও বার্তার ভিত্তিতে বলা হচ্ছে যে, ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের উপর গুলি চালানোর বিষয় নিয়ে রুশ সেনাদের ভেতরেই মতভেদ তৈরি হয়েছে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা শ্যাডোব্রেক এর প্রকাশ করা ওই রেডিও বার্তায় দুই রুশ সেনার কথোপকথনে ধরা পড়েছে যে, যতক্ষণ না কোনও এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ চলে যাচ্ছে, তারা সেখানে গোলাবারুদ দিয়ে হামলা করবেন না।
পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তার দাবি, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় হয়ত এই কনভয়ের অগ্রগতির খবর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এটা স্পষ্ট যে, ওই কনভয়ের গতি অনেকটাই কমে গিয়েছে’।
যে গতিতে প্রথম দিন থেকে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া, সেই গতি জারি থাকলে এত দিনে গোটা ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে চলে যেত। কিন্তু সামরিক অভিযানের সাত দিন হয়ে গেলেও এখনও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করতে পারেনি রাশিয়া। খারকিভ দখলের চেষ্টা করতে গিয়েও প্রবল বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পুরো বাহিনীকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ঠিক মতো পরিচালনা করার মতো নেতৃত্বের অভাব এবং সব মিলিয়ে সেনার অভ্যন্তরে একটা মতভেদের আবহ তৈরি হয়েছে।
তবে রাশিয়া পুরোপুরি ভাবে কিয়েভের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ইউক্রেন সরকারের পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তা। আর সে কারণেই হয়তো চূড়ান্ত ভাবে কিয়েভ দখলে নামার আগে রণকৌশলও বদলাতে পারে রাশিয়া।
গোয়েন্দা সংস্থা শ্যাডোব্রেক টুইটারে ইউক্রেন যুদ্ধের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪ ঘন্টার ভয়েস রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে এই কথোপোকথন থেকে, ‘রুশ সেনা ইউনিটগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ফাঁস হয়ে গেছে, কখনও কখনও তারা একে অপরের দিকে গুলি চালাচ্ছে’।
এই বার্তাগুলোর মধ্যে একটিতে ইউক্রেনের মাটিতে একজন রাশিয়ান সৈন্য এবং কমান্ড সেন্টারে তার সহকর্মীর মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বিনিময়ের ঘটনাও ফাঁস হয়েছে। যেখানে ওই রুশ সেনাকে বলতে শোনা গেছে যে, বেসামরিক লোকেরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তারা কোনও এলাকায় গোলা-বারুদ দিয়ে হামলা করবেন না।