প্রথম সপ্তাহ থেকেই এবার অমর একুশে বইমেলা জমজমাট। প্রকাশকেরা জানিয়েছেন, প্রত্যাশিত বই বিক্রিও হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে সফল বইমেলা হবে বলেও মনে করছেন তারা।
তবে মেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে বইপ্রেমীদের। সরু প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। স্টল খুঁজে পেতেও রয়েছে ভোগান্তি। স্টলের সামনে ঠিকমতো নেই স্টল নম্বর।
বুধবার আজিমপুর থেকে আসা সাইদা আহমেদ বলেন, প্রতিটা সারিতে তো একটা বোর্ড থাকতে পারত, যে এই সারিতে কোন কোন স্টল রয়েছে। স্টল খুঁজতে তাহলে এত ভোগান্তি হতো না।
তবে মেলার বিক্রি নিয়ে এবার সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন প্রকাশকেরা। বাতিঘর এর স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘অন্যান্য বছর প্রথম সপ্তাহে খুব বেশি বই বিক্রি হয় না। কিন্তু এবার প্রথম সপ্তাহ থেকেই বই কিনছেন বইপ্রেমীরা। ফলে শুরু থেকেই কিন্তু মেলা বেশ জমে উঠেছে। আমি মনে করি, এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে প্রকাশকেরা এবার খুশি মনেই ঘরে ফিরতে পারবেন।’
গত বছরও করোনার হানায় এলোমেলো বইমেলায় লোকসানের মুখে পড়েন অনেক প্রকাশক। এবারও করোনার শঙ্কা নিয়েই দুই সপ্তাহ পিছিয়ে মেলা শুরু হয়। বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণই করেনি। তবে মেলা শুরুর পর চিত্র উল্টাতে থাকে। কমতে থাকে করোনার সংক্রমণ। শুরুতে ১৪ দিনব্যাপী বইমেলা আয়োজনের কথা জানালেও পরে মাসব্যাপী বইমেলা করার কথাও জানায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
মেলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি ছুটির দিনে দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শুক্র ও শনিবার জনতার স্রোত গিয়ে সোমবার একুশে ফেব্রুয়ারির দিন জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলার চরিত্র কখন কেমন হয়, সেটা অগ্রিম বলা কঠিন। তবে প্রথম সপ্তাহে আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। এবার ভালো বিক্রি হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে আমরা মনে করি, এবার সফল একটি বইমেলা হবে।
বুধবার ছিল বইমেলার ৯ম দিন। মেলা চলে দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ১২২টি। ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন ঝর্না রহমান ও খায়রুল আলম সবুজ।
মূল মঞ্চ
বিকেল ৪ টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: বঙ্গবন্ধু-চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসলাম সানী, মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাঁথা। তাই এ তিন ক্ষেত্রে অধ্যয়ন ও চর্চা একযোগে, সমানতালে হতে পারে। একজন সাধারণ নাগরিকও সাহায্য করতে পারেন অসাধারণ ইতিহাস রচনায়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সংযোগ দরকার। মনে রাখতে হবে এ কাজ কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়, এ বিশাল দায়িত্ব প্রত্যেক বাঙালির।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুই বাঙালির আত্মপরিচয়ের উৎস। তাই বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য উপস্থাপনের পূর্বে তা সঠিকভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মনজুরুর রহমান ও মতিন রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবনী পুতুল, শহীদুল ইসলাম নাজু ও নাজমুল আহসান। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ পরিচালিত আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ও ‘শিল্পীবৃত্ত’-এর পরিবেশনা।
ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠান
বিকেল ৩ টায় ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ। স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন ২৫জন কবি। বিকেল ৪ টায় প্রদর্শিত হয় মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ’।
বৃহস্পতিবারের আয়োজন
বৃহস্পতিবার বইমেলার ১০ দিন। মেলা চলবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফউজুল আজিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সাহিদা বেগম ও কুতুব আজাদ। সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।