দেশ এখন অতিধনী ও আমলা নেতৃত্বের হাতে বন্দী বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চল ২২ পরিবারের হাতে বন্দী থাকলেও সে পরিসর এখন বিস্তৃত হয়েছে।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভার্চ্যুয়ালি এ সভার আয়োজন করে ওয়ার্কার্স পার্টি। ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা’ ঘোষণার ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু প্রেক্ষাপট পাল্টায়নি। আগে ২২ পরিবার ছিল, এখন আমলারা সব ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। এখন দুই অর্থনীতি—গরিবের ও বড়লোকের; দুই সমাজ—শহরের ও গ্রামের। বৈষম্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবখানে এখন ধর্মের আচরণ। সাম্প্রদায়িকতার ঘৃণ্য ছোবল পড়ছে মাঝেমধে৵ই।ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, যাঁরা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলছেন, তারাই সাম্প্রদায়িক তাণ্ডবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। খুব সহজেই এখন জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার কথা বলা যায়, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই ধর্ম অবমাননা আইন প্রণয়নের দাবি করা যায়। শাসক দল তাঁদের সঙ্গে আপস করেছে।
সভায় বলা হয়, ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) পল্টন ময়দানের জনসভার আয়োজন করে। সেখানে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার ঘোষণা ও ১১ দফা কর্মসূচি দেওয়া হয়। ওই ঘোষণার পর কাজী জাফর ও রাশেদ খান মেননকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও তাঁদের সম্পত্তির ৬০ শতাংশ বাজেয়াপ্ত করেন ইয়াহিয়া খানের সামরিক আদালত। পাশাপাশি মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুব উল্লাহকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চট্টগ্রামেও অনুরূপ ঘোষণার জন্য আবদুল্লাহ আল নোমান ও কাজী সিরাজকে সামরিক আদালত এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।সভায় সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ‘চারদিকে যখন তাকাই, দেখি কত ভুল আর ভুল করে গেছি। সেদিনকার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্বপ্ন, শপথ, সাহস; তা থেকে হয়তো অনেকেই বিচ্যুত, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। সে এক দুঃখের ইতিহাস।
সে ইতিহাস ভুলে গিয়ে, ২২ ফেব্রুয়ারির শপথ পালন করি। যে শপথ শুধু স্বাধীন দেশ নয়, স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সংগ্রাম, আজও অব্যহত রয়েছে।’সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আনলে আগামীতে তাদের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি করতে হবে।সভা সঞ্চালনা করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরূল আহসান। বক্তব্য দেন উন্নয়নকর্মী ও সাবেক বামনেতা শামসুল হুদা, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।