সিরীয় জঙ্গিদের অর্থায়নের অভিযোগে বাংলাদেশি এক নির্মাণশ্রমিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। ওই ব্যক্তি একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জিহাদি প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি বেশ কিছু ছুরি কিনেছিলেন বলেও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। খবর পিটিআইয়ের।আহমেদ ফয়সাল (২৭) নামের ওই ব্যক্তিকে গতকাল সোমবার দুই বছর আট মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নে সহায়তা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও ১০টি অভিযোগ এখনো বিবেচনাধীন। মামলার কৌঁসুলি বলেন, সিঙ্গাপুরের অপরাধ আইনে কোনো অপরাধীর ক্ষেত্রে এটি এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ। তবে ফয়সাল তাঁর কেনা ওইসব অস্ত্র সিঙ্গাপুরে ব্যবহার করেননি বলে আদালতের শুনানিতে উঠে এসেছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ১৫টি ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৮৯২ সিঙ্গাপুর ডলার সিরিয়ায় পাঠিয়েছেন আহমেদ ফয়সাল। এসব অর্থ সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) পাঠিয়েছেন বলে ধারণা করছেন আদালত।আদালতের শুনানিতে বলা হয়, আহমেদ ফয়সাল সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১২০০ সিঙ্গাপুর ডলার আয় করেন। জিহাদ ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে তিনি প্রথমে ফেসবুকে জেনেছিলেন। এরপরে সিরিয়ায় ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) সমর্থন করা শুরু করেন তিনি। তখন থেকে সাময়িক ই-মেইল ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে জিহাদ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন ফয়সাল।
বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট দেখে আহমেদ ফয়সাল সিরিয়া সরকারকে উৎখাতে আইএসকে সহযোগিতার জন্য সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এবং বাংলাদেশে থাকা পরিবারকে অর্থসহায়তার জন্য তিনি আর সিরিয়া যেতে পারেননি।আদালতের শুনানিতে বলা হয়, সিরিয়ায় ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা নিয়ে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মুসলিম দার্শনিকদের কিছু ভিডিও দেখেন ফয়সাল। সেসব ভিডিওতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আইএস নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করছে, এ বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর মোহভঙ্গ হয়। এরপরে হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) সমর্থন করা শুরু করেন ফয়সাল। তাঁর ধারণা, এই জঙ্গি সংগঠন তাদের লক্ষ্য অর্জনে আইএসের চেয়ে কিছুটা কম নিষ্ঠুর।
বর্তমানে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম। সিরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইদলিব এখন এইচটিএসের দখলে।২০১৯ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক চিকিৎসকের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করা শুরু করেন আহমদে ফয়সাল। ওই চিকিৎসক দাবি করেন, তিনি সিরিয়ার ইদলিবে একটি হাসপাতালে কাজ করছেন।ওই চিকিৎসক তাঁর ফেসবুক পেজে সিরিয়া সরকারের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড নিয়ে পোস্ট করেন। ফেসবুক পোস্টে এইচটিএস যোদ্ধাদের সমর্থন করেন তিনি। একপর্যায়ে ফেসবুক লাইভে এসে ওই চিকিৎসক আহত এইচটিএস যোদ্ধাদের চিকিৎসায় অর্থসহায়তার জন্য আবেদন জানান।সিরিয়ায় কর্মরত ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আহমেদ ফয়সাল মোট ৯৮২ সিঙ্গাপুর ডলার ট্রান্সফার করেন। এসব অর্থ জঙ্গিগোষ্ঠীকে সহায়তা করেছে এমনটা মনে করছেন সিঙ্গাপুরের আদালত।