কাটছাঁট করা পাঠ্যসূচিতে তিন বিষয়ে কম নম্বরে অনুষ্ঠিত এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তাক লাগানো ফল করেছেন শিক্ষার্থীরা। কেবল ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই লাখের কাছাকাছি শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশের প্রথম লক্ষ্য থাকবে মেডিকেল, বুয়েট ও স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু এ ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য যত আসন আছে, এর প্রায় চার গুণ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
তাই এবার ভালো ফল করেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাঁর কাঙ্ক্ষিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না। আর যাঁরা ভর্তি হবেন, তাঁদেরও ‘কঠিন যুদ্ধ’ করে সুযোগ নিতে হবে।অবশ্য সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষার আসন নিয়ে কোনো সংকট হবে না। কারণ, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যত শিক্ষার্থী পাস করেছেন, কলেজসহ সারা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে তার সামান্য বেশি। তাই সবাই ভর্তি হতে চাইলে কোনো না কোনো জায়গায় ভর্তি হতে পারবেন। বরং কলেজে অনেক আসন খালি থাকে। মূলত সংকটটি হবে ভালো মানের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
গত রোববার ২০২১ সালের এইএসসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। ফল প্রকাশের পর এখন সবার আগ্রহ ভর্তি নিয়ে।বর্তমানে সারা দেশে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অবশ্য কয়েকটি এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেনি।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) ও সমমানের কোর্সে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১৩ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন আছে ৬০ হাজারের মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে দুই লাখের মতো। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসন আছে সাড়ে ১০ হাজারের মতো।
সবচেয়ে বেশি আসন মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল সোমবার বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়, এমন কলেজ আছে ৮৮১টি। এর মধ্যে সরকারি কলেজ ২৬৪টি এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬১৭টি। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য মোট আসন আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি। আর ডিগ্রিতে (পাস কোর্স) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি। সারা দেশের ১ হাজার ৯৬৯টি কলেজে ডিগ্রি কোর্সে পড়ানো হয়।
তবে এত আসন থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আসন পূরণ হয় না। যেমন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি আসনের মধ্যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার আসন খালি রয়েছে।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসাগুলোতে আসন আছে ৬০ হাজারের মতো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজে আসন আছে ২৩ হাজারের বেশি। বাকি আসনগুলো দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফরি প্রতিষ্ঠান, ১৪ টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজ এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি আসনের মধ্যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার আসন খালি রয়েছে। তবে সারা দেশে এত আসন থাকলেও ভর্তির যুদ্ধটা হয়ে থাকে সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, স্বনামধন্য কিছু সরকারি কলেজ এবং কয়েকটি ভালো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৌনে ১১ শর মতো আসন কমানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারেন তা নয়, বরং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-৫–এর চেয়ে কম ফল করেও অনেকে ভর্তি পরীক্ষা ভালো করায় ভর্তি হচ্ছেন। তাই জিপিএ-৫ পাওয়াই শেষ কথা নয়, বরং আসল যুদ্ধটা হবে এখন। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় কে কতটা ভালো করল, তার ওপর।
ইউজিসির সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর গতকাল বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষায় সার্বিকভাবে ভর্তিতে কোনো সংকট হবে না। বরং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আসন খালি থাকে। মূল সংকট হলো মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কাঙ্ক্ষিত বিষয় বা কোর্সের স্বল্পতা। সেখানেই চাপ বেশি হবে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, উচ্চশিক্ষায় সবাইকে ভর্তি হওয়ার মানসিকতা এবং ব্যবস্থাটা বদলানো দরকার। বরং কর্মমুখী চিন্তা থেকে কোর্স-কারিকুলামে পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা দরকার।