মাঘের এই শেষ সময়ে হাড় কাঁপানো শীত নামার কথা। কিন্তু নেমেছে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যার পরও তা চলছে। সেই সঙ্গে দমকা শীতল বাতাস বইছে। ফলে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার জনজীবন যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নানা কাজে বাইরে যাঁরা বের হয়েছেন, তাঁরা শীতল বৃষ্টির ফোঁটা আর দমকা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছেন। বর্ষার মতো বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদায় মাখামাখি হয়ে পড়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃষ্টির এই ছটা আজ শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে পারে। রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি থাকবে। তবে আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির দাপট কমে শীতের দাপট বাড়বে। আকাশ থেকে মেঘ সরে যাবে। রোববার থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অনেক এলাকায় আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। আর ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীত বাড়তে পারে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আজ রাজধানীর সড়কে মানুষের চলাচল ছিল কম। তবে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে রিকশায় যাত্রী নিয়ে কারওয়ানবাজার এলাকায় এসে বাসায় ফেরার জন্য তড়িঘড়ি করছিলেন এক চালক। এক যাত্রী এলিফ্যান্ট রোডে যাওয়ার জন্য তাঁর রিকশায় উঠতে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এই বৃষ্টি সারা দিন চলবে। আর পারছি না। এখন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।’
অসময়ের এই বৃষ্টিতে আজ দুপুরের পর মিরপুর ১১ নম্বর থেকে ফার্মগেট হয়ে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত সড়ক যেন চেনা রূপে নেই। রাস্তার বড় অংশ ফাঁকা, মাঝেমধ্যে শাঁইশাঁই করে যাওয়া বাস আর ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা গেলেও সংখ্যা ছিল খুবই কম। রিকশাগুলো কাকভেজা হয়ে সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে। দুই একটা যা–ও চলছে, তা–ও বৃষ্টিভেজা আর কাদায় মাখামাখি, সড়কে টেনে টেনে চলতে হচ্ছে। সাবধানী নগরবাসীর কাউকে কাউকে মাথায় ছাতা নিয়ে সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
সাইমুম নামের একজন জানান, বেলা আড়াইটার দিকে আদাবরের বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি শ্যামলীতে ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে যান। এ সময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই তিনি ভিজে যান। হাসপাতাল থেকে এক রোগীকে নিয়ে পান্থপথের আরেকটি হাসপাতালে আসেন। গায়েই তাঁর জামাকাপড় শুকিয়ে যায়। শীতের মধ্যে এই ভেজা শরীরে বেশ কষ্ট হয়েছে। এখন কাশিও শুরু হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, মধ্যরাত পর্যন্ত একই ধারায় চলার পর বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে বৃষ্টি নামার সঙ্গে দমকা ঠান্ডা বাতাস থাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে, তা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও আজ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীত বেশি অনুভূত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আজ মেঘাচ্ছন্ন আকাশে রোদ ছিলে না। ফলে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি থাকায় শীতের অনুভূতি বেশি লাগছে। আজ সকাল থেকে রাজধানীতে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। সাধারণত শীতের এই সময়ে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বাতাস বয় না।আজ দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্ব উত্তরের এই জেলায় ভোর থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ঝোড়ো বাতাস। এতে বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইনে পড়ায় জেলাজুড়ে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
গত কয়েক দিনের তুলনায় এদিন পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটে গেলেও বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কাবু হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। সদর উপজেলার দেওয়ানহাট এলাকার অটোভ্যানচালক সলেমান আলী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বের হওয়া যায়নি। এখন একটু বৃষ্টি কমেছে, কিন্তু ঝড়ের মতো বাতাস বইছে। ঠান্ডার কারণে লোকজন বের হয়নি। এ জন্য এখন পর্যন্ত কোনো আয় হয়নি।আজ রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত কোনো এলাকার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগির কম থাকলে শীত বেশি অনুভূত হয়। আজ দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে, ১৭ মিলিমিটার। আর ঢাকায় সারা দিন বৃষ্টি ঝরলেও বেলা তিনটা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল এক মিলিমিটারের কম।