সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে যোগ দেওয়া আরেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আজ শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে অনশনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদীনকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ নিয়ে ২৩ অনশনকারীর ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৮ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ২৪ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান।
আমরণ অনশনের ৪ দিন এবং আন্দোলনের ১০ দিনে এসে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এখনো অনড় অবস্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রত্যেকের শরীর নেতিয়ে পড়লেও মনোবল ধরে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না তাঁরা। একই দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে ‘ভিসি পদ ফাঁকা আছে’ লিখে ‘চিকা’ মেরেছেন।
অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় গেছে। প্রতিনিধিদলের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মো. রাশেদ তালুকদার, অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস অনুষদের ডিন আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন খায়রুল ইসলাম। আজ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীকে গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠান। শিক্ষামন্ত্রী মুঠোফোনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে তাঁদের একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, অনশনকার দের অসুস্থ রেখে তাঁরা ঢাকায় যেতে পারবেন না। তাঁরা ভার্চ্যুয়ালি বসে বা শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে এলে বসে আলোচনায় আগ্রহী।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।