পদবি ও বেতন গ্রেড পরিবর্তন হচ্ছে না মাঠপর্যায়ে কর্মরত আট ক্যাটাগরির তৃতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবীদের। একই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য ‘সিনিয়র প্রশাসনিক’ কর্মকর্তার পদ সৃজন করা হবে না।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাব দুটি স্থগিত করেছে অর্থ বিভাগ। কারণ উভয় প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে-প্রথমত সচিবালয়ে কর্মরত ও মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়, সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজনে হলে অন্যান্য পর্যায় থেকে এ ধরনের আরও প্রস্তাব আসবে। ওই সময় প্রস্তাবগুলো কার্যকর না হলে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।সূত্র মতে, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের আট ক্যাটাগরি পদে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কাজ করছেন। এসব পদ হচ্ছে- অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, সিএ কাম উচ্চমান সহকারী, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার আরেটর, প্রধান সহকারী, ট্রেজারি হিসাবরক্ষক, সাঁট-মুদ্রাকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও উচ্চমান সহকারী।
তাদের বেতন স্কেল হচ্ছে জাতীয় বেতন গ্রেডের ১৩, ১৪ ও ১৫তম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই আটটি পদের পরিবর্তনে নতুন পদ ‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ এবং বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়। এর কারণ তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ের এসব কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তন, বেতন স্কেলে উন্নীতকরণ, নিয়োগবিধি সংশোধন ও নতুন করে প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের জন্য ৮টি, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য ২১৮টিসহ ২২৬টি ৯ম গ্রেডের শাখা কর্মকর্তা বা সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়।সেখানে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সরকারি কর্মচারী দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায় আটটি পদবির নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন প্রত্যাশী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন শাখা কর্মকর্তা বা সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজনের জন্য।
সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রণালয়ে দুটি প্রস্তাব পাঠানোর সময় এসব অনুমোদেনর যৌক্তিক ব্যাখা তুলে ধরে মতামত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মতামতে বলা হয়, ‘বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের মাঠ প্রশাসন সচিবালয়ের ন্যয় কাজ করে। সরকারের নীতি বাস্তবায়ন এবং মাঠপর্যায়ে সব বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনও এর অন্তর্ভুক্ত। কার্যপরিধির কারণে এসব কর্মীর সঙ্গে মাঠপর্যায়ের অন্যান্য অফিসের কর্মীদের তুলনা করা সমীচীন হবে না।সেখানে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও বাজেট পরীক্ষককে পদবি পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বেতন গ্রেড উন্নীত করা হয়। একইভাবে সাঁটলিপিকারকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে এবং হাইকোর্ট বিভাগের উচ্চমান সহকারী পদকে পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বেতন গ্রেড উন্নীত করা হয়। কিন্তু সচিবালয় বা হাইকোর্ট বিভাগের অনুরূপ না করে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলানির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিু ধাপে ১৩তম গ্রেডে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে পদ পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আটটি পদবির নাম পরিবর্তন করে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ১৩তম গ্রেডে বেতন স্কেল উন্নীত করা হলে মাঠপর্যায়ে অন্যান্য কার্যালয় এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ফলে উক্ত কার্যালয়গুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিদ্যমান পদবি পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীত করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, অর্থ বিভাগ আরও মনে করে, ২২২টি নবম গ্রেডের শাখা কর্মকর্তা বা সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজন করা হলে মাঠ প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এর ফলে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এরূপ আরও পদ সৃজনের বিষয়টি পরবর্তীতে বিবেচনায় আনতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংস্থাপন, গ্রহণ ও বিতরণ এবং ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারি শাখা ছাড়া অন্যান্য গুরুত্ব শাখার ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদ সৃজন করা না হলে অসামঞ্জ্যতা সৃষ্টি হবে।প্রস্তাবিত সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজন : সংস্থাপন শাখায় ৭২টি শাখা কর্মকর্তার পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরমধ্যে আট বিভাগের জন্য ৮টি, বিশেষ ক্যাটাগরি জেলা-৬টি, এ-ক্যাটাগরি জেলা-২৬টি, বি-ক্যাটাগরি জেলা-২৬টি ও সি-ক্যাটাগরি জেলা-৬টি রয়েছে। এছাড়া গ্রহণ ও বিতরণ শাখার জন্য শাখা কর্মকর্তা ৫৮টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।এরমধ্যে বিশেষ ক্যাটাগরি জেলা-৬টি, এ-ক্যাটাগরি জেলা-২৬টি, বি-ক্যাটাগরি জেলা-২৬টি। আর ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারী শাখার জন্য ৩২টি শাখা কর্মকর্তার পদ সৃজনের প্রস্তাব রয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ ক্যাটাগরি জেলা-৬টি, এ-ক্যাটাগরি জেলা-২৬টি। এছাড়া ঢাকা, চটগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা ব্যতীত ৬০টি সদর উপজেলার জন্য ৬০টি সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ সৃজনের প্রস্তাব রয়েছে।