সরকারি নির্দেশনা কার্যকরের আট দিন পরও দেশের দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনার র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়নি। সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে অবশ্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু পরীক্ষা হচ্ছে।করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১০ জানুয়ারি ১১ দফা বিধিনিষেধ দেয় সরকার। এ বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে। বিধিনিষেধে বলা আছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার হজরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা গতকাল পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের তিন বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের টিকা সনদ দেখা হচ্ছে। কারও এই সনদ না থাকলে তাঁকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। তিন বিমানবন্দর মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকেন।
ঢাকার হজরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা গতকাল পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ এ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে ১০ হাজার যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসেন। দেশে আসার পর এসব যাত্রীর করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয় না। তবে বিমানবন্দরে হেলথ ডেস্কের মাধ্যমে আসা যাত্রীদের টিকার সনদ দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বাকি দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও করোনার টিকা সনদ দেখা হচ্ছে।শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষাগারে আটটি বুথে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীর পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নতুন করে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা কঠিন।পন
বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিমানবন্দরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য জায়গা নির্ধারণ, জনবল ও যন্ত্রপাতির চাহিদা জানিয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে পরীক্ষা করা হচ্ছে দৈবচয়নের ভিত্তিতে।শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, এ বিমানবন্দরে জায়গার স্বল্পতা অনেক। প্রতিদিন এই বিমানবন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী আসেন। বিমানবন্দরে এতসংখ্যক যাত্রীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা কঠিন। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট মহাদেশ, অঞ্চল বা দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য স্থান নির্ধারিত করা হলে বা অন্য কোনো স্থানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে এ পরীক্ষা করতে অসুবিধা হবে না।বিমানবন্দরগুলোতে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা কতটুকু করা সম্ভব, তা প্রথমে যাচাই করতে হবে। আমরা চাই বিমানবন্দরগুলোতে সব যাত্রীর এই পরীক্ষা করা হোক। তবে বিমানবন্দরগুলোতে জায়গার সংকট আছে। কিন্তু শাহজালালে জায়গা একেবারেই নেই
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এম ফরহাদ হোসেন খান বলেন, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ যাত্রী বিদেশ থেকে আসেন। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনার টিকা ও পরীক্ষার সনদ যাচাই করা হয়। তবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয় না। সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি সম্পর্কেও তিনি অবগত নন।অবশ্য সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে আসা সব যাত্রীকে এ পরীক্ষা করা হয় না। কেবল ইউরোপের কোনো দেশ থেকে এলে দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রতি ফ্লাইটে ২০ থেকে ৩০ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ জানান, দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার যাত্রী এ বিমানবন্দরে যাতায়াত করেন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা হবে। সে সভায় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলোতে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা কতটুকু করা সম্ভব, তা প্রথমে যাচাই করতে হবে। আমরা চাই বিমানবন্দরগুলোতে সব যাত্রীর এই পরীক্ষা করা হোক। তবে বিমানবন্দরগুলোতে জায়গার সংকট আছে। কিন্তু শাহজালালে জায়গা একেবারেই নেই।’