আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিচয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে ফোনে চাকরির সুপারিশ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন তারেক সরকার নামের চাকরিচ্যুত এক কারারক্ষী। গতকাল মঙ্গলবার পল্টনে পলওয়েল মার্কেটের সামনে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে তিনি নিজেকে খুলনার সাংসদ শেখ তন্ময় পরিচয় দিয়ে খুলনার আইজি প্রিজনসকে (কারা মহাপরিদর্শক) চাকরির তদবির করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে বিভাগীয় মামলায় চাকরি হারান তিনি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানান।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত রোববার তারেক জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিচয় দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেনকে ফোন করেন। কিন্তু তাঁর কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় বিষয়টি ডিএমপিকে জানান আখতার হোসেন। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) মিরপুর বিভাগকে। ডিবি পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মুঠোফোন নম্বরটি জাহাঙ্গীর কবির নানকের নয়। এটি তারেক নামের একজনের। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের ফোন নম্বর ক্লোন করে সচিবকে ফোন করেন। এ ঘটনায় তখনই রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারেক বলেছেন, তিনি নরসিংদীর জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পরিচয়ও দিতেন। তারেক ২০০৬ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ পান। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলায় তাঁর ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। ওই বছরে একজন সাংসদ সেজে খুলনার আইজি প্রিজনস মোমিনুর রহমানকে ফোন করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তারেকের ব্যবহৃত মুঠোফোনের মধ্যে নিয়োগ–সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র, নিয়োগ বাবদ আর্থিক লেনদেনের হিসাবসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন ও সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, তারেকের বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও একটি মামলা রয়েছে।
মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম অঞ্চলের ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় বলেন, রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরে তাঁকে কারাগার থেকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।