দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গতকাল শনিবার থেকে আবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। তবে আবাসিক হলগুলো খোলাই থাকবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও সশরীর ক্লাস বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে পরীক্ষা শেষ করে আগামী মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এভাবে নিজেদের মতো করে আলাদাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে স্কুল-কলেজে আপাতত সীমিত পরিসরে সশরীর ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত এমন মনোভাবের কথাই জানিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৮ বছরের নিচের বয়সী) করোনার টিকা দেওয়ার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী, আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো বিকল্প চিন্তাও তাঁদের আছে। যদিও এখনো বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আজ রোববার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে না। এখন শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি খুব জোরের সঙ্গে চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে টিকাদান কর্মসূচিতে বাধা পড়ার আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে মোকাবিলা করতে হবে। কাজেই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে না। তবে যদি তেমন প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলা হচ্ছে, যা একটি গুজব।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী এ-সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে দেননি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আবার সভা করা হবে। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি শুরু হয়েছিল। টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে ক্লাস হচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত আছে।করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নতুন কোনো ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্বে) শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল বলেন, আপাতত এখনকার মতো সীমিত পরিসরেই ক্লাস চলতে থাকবে। তবে শিগগির করোনা–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাঁদের ভাবনা হলো—শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।বর্তমানে সারা দেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ১৬ লাখের মতো। মাউশির হিসাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়া হয়ে গেছে। বাকি শিক্ষার্থীদের টিকা এ মাসের মধ্যে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত আলাদাভাবে
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান গতকাল বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনলাইন ক্লাস চলবে। আর আবাসিক হল এখন খোলাই থাকবে। পরবর্তী সময় আবাসিক হলের বিষয়ে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, তাঁরা কোর কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এখন পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষাগুলো শেষ হলে পরিস্থিতি দেখে ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৯ জানুয়ারি থেকে সশরীর ক্লাস বন্ধ করে আবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে।দেশে বর্তমানে ৫০টি পাবলিক ও ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইনে চলে। শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যার যার মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।তবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার সক্ষমতা সমান নয়। সব শিক্ষার্থীরও এ বিষয়ে সমান সুযোগ নেই।