ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে নৌকার পরাজয়ের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এর বিতর্কিত ভূমিকাকে দায়ী করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।
তার দাবি, নৌকা হারেনি, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নৌকার প্রার্থীকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে।
এদিকে, নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন নির্বাচনে হেরে একই অভিযোগ জানিয়ে ভোট পুনঃগণনার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে নৌকার প্রার্থী আবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পিবিআইয়ের ভূমিকা ও অনিয়মের অভিযোগে ভোট পুনঃগণনার আবেদন পেয়েছি। পিবিআই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এ রকম কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে অবহিত করা হয়নি।
একই রকম বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাইনুল হক।
নবাবপুর ইউনিয়নে মাত্র ৮৬ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের পর সমালোচনার মুখে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও একই এলাকার বাসিন্দা উপজেলা চেয়ারম্যান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।
মঙ্গলবার রাতে নবাবপুর ইউনিয়নে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহিরকে জয়ী করতে পিবিআই নৌকার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাঁধা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পিবিআই কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে ভোট দিতে বাঁধা সৃষ্টি করেন। নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে নিজ কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেয়নি পিটিআইএর সদস্যরা।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পিবিআই একটি তদন্ত সংস্থা। বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে পিবিআই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেনি, তাহলে সোনাগাজীর একটি ইউনিয়নে পিবিআই কোন এখতিয়ারে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করল? তিনি এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ও পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশনারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন।
এদিকে একই অভিযোগে ৩০ ডিসেম্বর পরাজিত হওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভোট পুনঃগণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকার এজেন্টদের হুমকি ধামকি দিয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রের ফলাফলে কাটাকাটি দেখা গেছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের অন্তভুক্ত করেছি। জেলা প্রশাসনের অন্তর্ভুক্তির তালিকায় পিবিআই ছিল না। পিবিআই কেন ভোট কেন্দ্রে গেছে আমাদের জানা নেই এবং তারা আমাদের কিছু অবগত করেনি।
ফেনী পিবিআই পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে পালন করা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। ক্রাইম সিন সংগ্রহের জন্য আমাদের একটি টিম নির্বাচনী এলাকায় ছিল। তবে তারা কাউকে ভোট প্রদানে বাঁধা দিয়েছে বা কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করছে এবং হুমকি ধামকি দিচ্ছেন পিবিআই সদস্যারা এমন প্রমাণ রয়েছে জানালে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ দফার ইউপি নির্বাচনে সোনাগাজী উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে আটটিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও শুধুমাত্র নবাবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জহিরুল আলম জহির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। এছাড়া ফেনীর ৪৩ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪২ ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয় লাভ করে।