নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর ভোটের খরচের কথা বলে ঠিকাদারি করেন এমন এক যুবলীগ নেতার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। শনিবার এ-সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস হয়, যা নারায়ণগঞ্জে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। তা ভোটের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তাঁর ভোটের নাম করে টাকা চাওয়ার এই ঘটনাকে ‘জঘন্য কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি মনে করেন।সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, ফাঁস হওয়া এই ফোনালাপ গত ২৪ ডিসেম্বরের। ফোনটি করেন খোকন সাহা। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (নান্নু), যিনি ঠিকাদারি করেন।
ফোনালাপটি ছিল এ রকম—
খোকন সাহা: নান্নু, নান্নু; খোকন সাহা বলছি।
রফিকুল ইসলাম (নান্নু): স্লালামু আলাইকুম, দাদা।
খোকন সাহা: শোনো, আমি তো আইভীর পক্ষে, শামীম ওসমান তো আইভীকে…(ছাপার অযোগ্য), বুঝছ না। আমার তো কিছু টাকাপয়সা লাগব।ফোনালাপের একপর্যায়ে খোকন সাহা বলেন, ‘কালকে (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার সময় পুরান কোর্টে আমার চেম্বারে পাঁচ লাখ টাকা পাঠাইয়া দিবা।’জবাবে রফিকুল ইসলাম ফোনে বলেন, ‘আমি কেন করব? আমি আইভীর কিছু নাকি? আমি কেন করব, দাদা? আমি তো সিটি করপোরেশনের কাজও করি না, বোঝেন না। আমি সোনারগাঁয়ে কাজ করি।’তিন মিনিট এক সেকেন্ডের ফোনালাপে বেশ কয়েকবার পাঁচ লাখ টাকা পাঠানোর কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা খোকন সাহা। একপর্যায়ে তিনি ওই যুবলীগ নেতাকে বলেন, ‘তুমি দিবা না দিবা, তোমার ব্যাপার। তোমাকে অনেক পছন্দ করি ও ভালোবাসি, ঠিক আছে। টাকা যদি পাঠাও, তাহলে আমি তোমার সোনারগাঁয়ের কাজ করে দেব। যদি পাঁচ লাখ টাকা পাঠাও, তাহলে তোমার কাজ করে দেব; না পাঠালে উল্টাইয়া যাইবগা।’ এর জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আচ্ছা, করেন।’গতকাল এ ফোনালাপ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। খোকন সাহা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। খোকন সাহা এবার সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। গত এক বছর যাবৎ তিনি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আইভীর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়ে আসছিলেন। তবে আইভী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি আর প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। আবার আইভীর নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিতে দেখা যায়নি।
ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন সাহা বলেন, ‘দলের কর্মী ও ছোট ভাই হিসেবে তাঁর কাছে আমি টাকা চাইতেই পারি। তাঁর অনেক সমস্যা, অনেক টাকা আছে। তাই চেয়েছি।’ তবে তিনি দাবি করেন, দলীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনের জন্য টাকা চাওয়া হয়নি। দলের কর্মী হিসেবে টাকা চেয়েছেন। কিন্তু ওই যুবলীগ নেতা টাকা দেননি।‘ওনাকে (খোকন সাহা) তো এমন কোনো গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এটা জঘন্য কাজ করেছেন, আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। দল নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী, আ.লীগের মেয়র প্রার্থী
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২৪ ডিসেম্বর রাতে খোকন সাহা তাঁকে ফোন করেন। নৌকার প্রার্থী আইভীর নির্বাচনী প্রচারের জন্যই তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘খোকন সাহার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। আইনজীবী খোকন সাহার কাছেও কোনো দিন যাইনি। আমার তো কোনো সমস্যাও নেই। টাকাও দিইনি তাঁকে।’ফাঁস হওয়া ফোনালাপ যাচাই করে দেখা যায়, ওই যুবলীগ নেতার সঙ্গে হুমকির সুরে কথা বলছিলেন খোকন সাহা। ফোনে খোকন সাহা বলেন, ‘তোমাকে পরিষ্কার বলে দেই, তোমার পক্ষে কেউ নাই, ঠিক আছে, তোমার নামে দলের অনেকে অনেক কথা কয়। আমি তো দলের কাজ করতাছি। আইভীকে পাস করানোর জন্য কাজ করতাছি। আইভি পাস করলে তোমার সব কাজ করে দিমু।’ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শুনেছেন বলে জানান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি গতকাল বলেন, ‘কোনো দিন কারও কাছে টাকা চাইনি। আমার হয়ে কেউ টাকা চাইবে, সেটাও বরদাশত করব না। ওনাকে (খোকন সাহা) তো এমন কোনো গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এটা জঘন্য কাজ করেছেন, আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। দল নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’