আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়াতে পারে না। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এসব হামলা সম্ভব হয়েছে। এই অভিমত জানিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। অবিলম্বে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন তাঁরা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধূরী, আইনজীবী আমির-উল ইসলাম, এম হাফিজউদ্দিন খান ও আকবর আলি খানের মতো ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিরা সব নাগরিকের সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরোধী এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

আজ শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কুমিল্লায় হামলার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক, সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। ওই ঘটনাকে (কুমিল্লার ঘটনা) কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, যার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী, তা খুঁজে বের করতে হবে।’

পাশাপাশি কিছু এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণ ‘পরিমিত শক্তিপ্রয়োগ ও আইনানুগ’ ছিল কি না, তা–ও তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিহত না করে একে অপরকে দোষারোপ করার পুরোনো অভ্যাসে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দোষারোপের রাজনীতি প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালে রাখতে সহায়তা করে। রাজনীতিবিদদের এ ধরনের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে এই ধরনের অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও এর কোনো বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। অপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি সমাজের সব ‘শুভ শক্তিকে’ একত্র করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সব নাগরিকের সম–অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত একটি বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় সরকারের প্রতি।

বিবৃতিদাতা অপর বিশিষ্টজনেরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, আইনজীবী শাহদীন মালিক, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক।

আরও রয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী, আইনজীবী সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক ও গবেষক স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯–এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, মানবাধিকারকর্মী ফস্টিনা পেরেরা, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ।

Leave a Comment