ম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনায় সারা দেশে সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং পাঁচজন মুসলিম। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনকালে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে বুধবার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে পুলিশ এসব তথ্য জানায়।
পুলিশ জানায়, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সারা দেশে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য থানা-পুলিশের পাশাপাশি বিশেষায়িত ইউনিটসমূহকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।যে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরে সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশ জানায়, গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় কুমিল্লার নানুয়া দিঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারী উসকানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায়। পরবর্তীতে আরও উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারী সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজামণ্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া, দুষ্কৃতিকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজামণ্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালীতলাসহ আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।
পুলিশ জানায়, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে জন্য সারা দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, পুলিশ টহল জোরদার করা হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটায় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভার শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামণ্ডপে ৫০০/৬০০ দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং ৫/৬টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতিকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়। জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারায়।
একই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত ১৪ অক্টোবর সকাল ১১ টা ২০ মিনিটে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা মন্দিরের কাছে ৮০০/১০০০ উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো হয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ইট, লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবির টহল দলের উপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারায় এবং পরবর্তীতে পুকুর থেকে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, গত ১৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জ থানার বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষ (১৯) নিজের ফেইসবুক আইডিতে পবিত্র কাবা শরিফের অবমাননা করে ছবি আপলোড করে। পরবর্তীতে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাত প্রায় আটটার সময় এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।রএছাড়া, একই ঘটনার জের ধরে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়া থানা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থানা, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কাশিমপুর থানাসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়।