পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। যাতে কোনো সাধারণ নাগরিক সাইবার ক্রাইমের শিকার না হন।
পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদেরও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সরকারের ও পুলিশ বাহিনীর অনুশাসন মেনে চলার নির্দেশ দেন আইজিপি।
তিনি বলেন, পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। কতিপয় কিছু পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তার আচরণ বদলাতে হবে। কোনো সদস্য মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না। মাদকের সঙ্গে কারো কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে তিন দিনব্যাপী অপরাধ পর্যালোচনা সভার শেষ দিনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সমাপনী বক্তৃতায় এসব বলেন আইজিপি।
পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে অনুষ্ঠিত এ সভায় সব অতিরিক্ত আইজিপি, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার, সব জেলার এসপি, মেট্রোপলিটন এলাকার উপ-কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি দেশে ও দেশের বাইরে একটি চক্র রাষ্ট্র, বঙ্গবন্ধু পরিবার, সরকার, বিচার বিভাগ, শিল্পপতিসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যম ব্যবহার করে নানা বিষোদগার ছড়াচ্ছে। ভাড়া করা সাইবার সস্ত্রাসী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা গেলেও দেশের বাইরে থাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জবাবদিহিতা না থাকায় এসব অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরে ক্রাইম কনফারেন্সে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলেন। যার প্রেক্ষিতে আইজিপি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেন।
আইজিপি বলেন, এবার নতুন নীতিমালায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ করা হচ্ছে। কনস্টেবল নিয়োগ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আমরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ এবং উন্নত অনেক দেশের নিয়োগ নীতিমালা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ পুলিশের উপযোগী কনস্টেবল নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ণ করেছি। এর ফলে আমরা কনস্টেবল পদে মেধা ও শারীরিক দিক থেকে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্য নিয়োগে সক্ষম হব। অচিরেই পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদেও নতুন নীতিমালা অনুযায়ী লোক নিয়াগ করা হবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনায় আমরা দেশ ও জনগণের কল্যাণে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না’।
মাদকের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্যের মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লেষ থাকতে পারবে না। কারো যদি মাদকের সঙ্গে কোনো সংশ্লেষ থাকে তাহলে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্যের মাদকগ্রহণ, মাদক ব্যবসা বা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে পুলিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
বাংলাদেশ পুলিশকে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বাহিনীর শৃঙ্খলা এবং কল্যাণ এক বিষয় নয়। শৃঙ্খলাকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, জুনিয়রদের কাজকর্ম তদারক করতে হবে। ফোর্সদের সুযোগ-সুবিধা দেখতে হবে। তাদের পুলিশ বাহিনীর একজন যোগ্য সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সিনিয়র সহকর্মীদের পালন করতে হবে।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রজেক্টে অনেক বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন। তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু দিন পরই ইউনিয়ন পরষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হতে পারে এ জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, শুধু চাকরি করলে হবে না। চাকরিতে প্রাইড নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য মানসিকতা ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। চাকরির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।
আইজিপি পুলিশ বাহিনীকে বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘সংগঠন যত বড় হবে, তত এর শ্রী বৃদ্ধি ঘটবে। দেশ ও দেশের মানুষ এর থেকে উন্নত সেবা পাবে।’