হাসপাতালগুলো আর রোগী সংকুলান করতে পারছে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনা থেকে সুরক্ষায় প্রত্যেককে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, হাসপাতালগুলো আর রোগী সংকুলান করতে পারছে না। তবে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে পরিস্থিতির উত্তরণে।

তিনি বলেন, আমরা মৃত্যুর হার কমাতে চাই। শুধু সরকার পারবে না, সবাইকে প্রয়োজন। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। বাসে-ট্রেনে গাদাগাদি করে আসলে চলবে না। তাহলে আবার সংক্রমণ বাড়বে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত ডেঙ্গু ও করোনা মহামারিতে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন (বিএসএম) ও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. বিল্লাল আলম। সঞ্চালনা করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিবি, পক্স আগে মানুষের ছিল না। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে অসুখগুলো আসে, এখনো আসছে। আমরা জানি যে, করোনা কোনো একটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে। স্মল পক্স প্রতিরোধ করা গেছে। কোনো এক সময় করোনাও মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছি। কোভ্যাক্স থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি, নিজেরাও কিনছি। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ থেকে ২৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। একসঙ্গে এত ভ্যাকসিন আমরা পাব না, রাখতেও পারবো না। আমরা চেষ্টা করছি, যখন যেটা পাওয়া যায় আনার জন্য। বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র ভ্যাকসিন তৈরি করেছে এবং স্টক করেছে। জনসংখ্যার চারগুণ-পাঁচগুণ বেশি ভ্যাকসিন তারা স্টক করেছে। অনেক দেশ আছে যেখানে ভ্যাকসিন পৌঁছেনি।

তিনি বলেন, আমরা একবারে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারবো না। ধৈর্য্য ধরতে হবে। আস্তে আস্তে সবাইকে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। কোটি কেটি লোক রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমাদের যারা বিরোধী আছেন, ভ্যাকসিন যখন কম থাকে তখন বলে ভ্যাকসিন কোথায়? যখন বেশি লোক আসে, লোক বেশি কেন আসলো? না আসলেও অসুবিধা, আসলেও তাদের কাছে অসুবিধা। তাদের আমি অন্য কোনো কাজে দেখিনি। করোনার সময় মানুষের পাশে তাদের কখনো দেখিনি। মাঝে মাঝে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি। শুধু সমালোচনায় দেখেছি। সমালোচনা করা সহজ খুব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যদি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো রাখতে হয় তাহলে সংক্রমণ রোধ করতে হবে। মাস্ক পরতে মানুষের অনীহা। আমরা জানি মাস্ক পরতে কষ্ট হয়। বিদেশে মাস্ক পরতেই চায় না। বড় বড় দেশে, উন্নত দেশে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও আমরা দেখেছি মাস্ক পরতে চায় না। তার ফলোয়াররাও কেউ মাস্ক পরতে চায় না। আমাদের দেশে অবশ্য এটা নাই। আমাদের দেশে মানুষকে বললে সেটা শোনে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি কঠিন হবে। আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। হাসপাতালে জায়গা সংকুলনার করতে পারছি না। এখন প্রায় সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। জীবন জীবিকা পাশাপাশি চলবে। জীবন বেশি গুরুত্ব। জীবনকে রক্ষা করে আমাদের জীবিকা অর্জন করতে হবে। আমরা মৃত্যুর হার কমাতে চাই। শুধু সরকার পারবে না, সবাইকে প্রয়োজন। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। সংক্রমণ অনেক বেড়েছিল, এখন কমে এসেছে। ৩২ শতাংশে উঠেছিল, গতকাল ২৩ শতাংশ দেখলাম। এই কমার হার ধরে রাখতে চাই। যারা বাসে-ট্রেনে চলেন, গাদাগাদি করে আসলে চলবে না। তাহলে সংক্রমণ আবার বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে মশার প্রাদুর্ভাব বাড়বে। কোভিড নিয়ে বলতে চাই, আমি অনেক পরে এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়েছি। আমরা রাতারাতি হাসপাতাল বাড়িয়ে ফেলতে পারি না, চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়িয়ে ফেলতে পারি না। এখন সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, আমাদের খেয়াল করতে হবে আমরা যেন এই রোগ বাড়িয়ে না চলি। হাসপাতালে আর বেড বাড়ানো সম্ভব হবে না। নন-কোভিড রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের সংযত হতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, আমরা করোনা নিয়ে ক্লান্ত সবাই। এর মধ্যে নতুন করে এলো ডেঙ্গু। করোনায় বড়রা আক্রান্ত বেশি হয়। উল্টো ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে। আমরা খুব একটা ভালো সময়ে নেই। প্রতি দিনই সংক্রমণ হচ্ছে। মৃত্যু ২০০ এর উপরে। আমরা নানা পন্থা অবলম্বন করেছিলাম, তার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি সেটা খুব একটা মানা হচ্ছে না।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশি। চিকিৎসার চেয়ে মশা নিধন বেশি জরুরি। ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল দরকার নেই। আমি মনে করি, ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল করলে চিকিৎসায় সময় নষ্ট হবে।

পরিষদের মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, সিটি করপোরেশন বাড়ি আঙিনাভিত্তিক অভিযান চালাচ্ছে। অফিস-আদালতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এর আগে ডেঙ্গু ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির করোনার চিকিৎসার দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, কোনো দেশে যখন ডেঙ্গু প্রবেশ করে, সে শুধু প্রবেশই করে, বের হতে জানে না।

Leave a Comment