ইভ্যালির দায় কি প্রথম আলো নিবে?

প্রথম আলোর খবর বলছে, ইভ্যালির কার্যালয় বন্ধ, হটলাইনেও সাড়া মিলছে না। পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া টাকার জন্য ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় করছে। পণ্য ও অর্থ ফেরত না পাওয়া গ্রাহকেরাও রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় শুরু করেছেন। তবে ইভ্যালির কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। হটলাইন নম্বরেও ফোন করে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার সত্য মিথ্যা আস্তে আস্তে বোঝা যাবে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না।


আমি বরং জানতে চাইছি ইভ্যালিকে এই জায়গায় আনার পেছনে প্রথম আলো কিংবা এই দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম কী তাদের দায় এড়াতে পারবে? এই প্রথম আলোর হোমপেইজই তো কিছুদিন আগে ইভ্যালির বিজ্ঞাপনে পূর্ণ ছিল। ওয়েবসাইটে ঢুকতে হলে আগে ইভ্যালিতে ঢুকতে হতো। তাও সেই সময়ে এই বিজ্ঞাপন নেয়া হয়েছে যখন প্রথম আলোতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে একটা লিড নিউজ হয়ে গেছে।


আমি জানি পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন সংকট আছে। এই বিজ্ঞাপন যদি নিউজ করার আগে হতো আমি মেনে নিতাম। কিন্তু নানা অনিয়ম নিয়ে যখন নিউজ করা হয়ে গেছে লিড হিসেবে তখন অবশ্যই বিজ্ঞাপন নেয়া আমার চোখে অনৈতিক। আমার প্রিয় প্রথম আলো একটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের নিউজ করবে, আবার সেই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নিয়ে হোমপেজ ভরিয়ে রাখবে এটা আমার কাছে নৈতিকতার অবক্ষয় মনে হয়েছে।


আর শুধু প্রথম আলো বলছি কেন, এই দেশের প্রায় অধিকাংশ গণমাধ্যম এই কাজ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কী করে এমন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর নেয়। এই যে সবাইকে ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দেয়া আর আইনের দুর্বলতা সেগুলোই কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রতারণার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। তবে ধন্যবাদ সেই সব প্রতিষ্ঠানকে যারা ইভ্যালির সঙ্গে একে একে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ। এসব উদ্যোগ না নিলে আরও বহু লোকে ক্ষতিতে পড়তো। তবে সরকারি দপ্তরের আরও আগে থেকেই এই উদ্যোগ দরকার ছিল। বিশেষ করে নিয়মহীনভাবে কোন প্রতিষ্ঠান যেন এভাবে মানুষকে ঠকাতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ থাকতেই হবে।


আর এই দেশের জনগনের কথা কী বলবো? মূল্যবোধের এই অবক্ষয় তো সবখানে। গতবছরের ২০ আগস্ট আমি ইভ্যালিকে নিয়ে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ডেসটিনি বা ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠান কেন গড়ে ওঠে জানেন? কারণ, এই দেশের একদল লোক যারা মুহুর্তেই বড় লোক হওয়া স্বপ্ন দেখেন।


আসলে সংকটটা অর্থনৈতিক নয়, মূল্যবোধের। সৎভাবে পরিশ্রম করে, সৎভাবে ব্যবসা করে, সততার সঙ্গে চাকুরি করে, কিংবা যে কোন ধরনের কষ্ট করার বদলে এই দেশে অনেকেই আমরা সহজ রাস্তা খুঁজি। শেয়ার বাজারে গিয়ে এখানে একদিনেই বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে লোকজন। সমস্যাটা আসলে ইভ্যালি বা ডেসটিনির নয়। সমস্যা আমাদের লোভের। এই লোভ যতোদিন থাকবে ততোদিন এভাবেই নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।


সেদিন আরও লিখেছিলাম, আমি কোনদিন ইভ্যালির অফারে পা দেইনি। কখনো ডেসটিনি আমাকে টানেনি। কখনো আমার হুট করে বড়লোক হতে ইচ্ছে করেনি। আমাকে আপনাদের বইয়ের মানুষ মনে হতে পারে, মনে হতে পারে লোকটা কেন এতো নীতিকথা বলে? বলি কারণ আমি দেখি আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট এই মূল্যবোধের অবক্ষয়।
হ্যা, জীবন চলার জন্য খাবার কিনতে হয়, বাসাভাড়া বা সন্তানকে পড়াতে হয়। এজন্য টাকা লাগে। কিন্তু অবশ্যই সেটা সৎপথে হতে হবে এবং চাহিদা থাকা উচিত সীমিত। আমি আমার জীবন চলার পথে তিনটা জিনিষ মনে রেখেছি। মানবিক, সৎ ও সাধারণ জীবনযাপন। আপনাদেরও তাই বলি।


আমি সবসময় মনে রাখি, সবসময় মানবিক থাকতে হবে, সাধারণ জীবনযাপন করতে হবে, সৎপথে চলতে হবে। সৎ মানে প্রতিদিনের সৎ। আমৃত্যু সৎ। এই কথাগুলো মানলে দেখবেন এই গোটা পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর তখন বেঁচেও আনন্দ পাবেন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে বিবেকবোধ দিক। সবাই ভালো থাকুন। সৎপথে থাকুন।

Leave a Comment