পর্দার আড়ালে থাকা নারীর চোখ নয়; বরং চোখে কালি পড়ে যাওয়া, প্রবৃত্তির বন্দিত্ব ও উদ্বিগ্নতায় ভোগা নারীকে পশ্চিমের অদৃশ্য সাংস্কৃতিক বলয় থেকে স্বাধীন করতে হবে। বোরকা আর বিকিনির সম্পর্ক উত্তর-দক্ষিণ মেরুর মতো সম্পূর্ণ উলটো। আমাদের দেখতে হবে, এর কোনটি নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
—আবিদ উল্লাহ জান (কানাডিয়ান সাংবাদিক)
ইসলামি শিক্ষার সঠিক প্রয়োগ কখনো নারীর জুলুমের কারণ হতে পারে না। কেননা, পৃথিবীর সবচেয়ে নারীবান্ধব ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এখানে ইসলাম নারীকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে, তা পশ্চিমা নারীস্বাধীনতার মতো নয়। ইসলাম নারীর জন্য সম্মান, মর্যাদা ও সমতার সঙ্গে বেঁচে থাকার বন্দোবস্ত করেছে। প্রকৃত স্বাধীন নারী সর্বদা শালীনতাপূর্ণ পোশাক পরে।
হিজাব নারীকে এক ভিন্ন পরিচয় দিয়েছে। নিজের দেহের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন করেছে। নারীরা সর্বদা পুরুষের কুদৃষ্টি বা শোষণের লক্ষ্যবস্তু হলে তাদের পক্ষে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হওয়া সম্ভব হবে না।
পরিপূর্ণ হিজাব নারীদের স্বাধীনতার অনুভূতি দেয়। তারা নিজেদের মানুষরূপী নেকড়ের লালসার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বিপরীতে হিজাব খুলে ফেললে পুরুষের লালসাপূর্ণ দৃষ্টি তার ওপর পড়ার আশঙ্কা থাকে।
আমরা যেকোনো চকচকে টিভি-ম্যাগাজিন বা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালে দেখব, অধিকাংশ বিজ্ঞাপনে আবেদনময় ভঙ্গিতে স্বল্পবসনা নারীর পোজ রয়েছে। এমন ছবির উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুরুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এটা কীভাবে স্বাধীনতা হতে পারে? এটা তো সুস্পষ্ট নারী অবমাননা। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, পশ্চিমা সমাজ নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে দেখে।
মানবজাতির বিশুদ্ধতা ও আত্মিক পবিত্রতা বজায় রাখতে সমাজের যেকোনো স্তরে ফ্রিমিক্সিং ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া এ ধরনের ইসলামি আইনের নিন্দা জানাতে তৎপর। সমাজে পাপাচার ও দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি হলো মন্দকে অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন করা।
সমাজসংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো হিজাব। এটি নারীর সৌন্দর্যকে পরপুরুষের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ বৈবাহিক সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে বিয়ের বাইরে এর প্রভাব ধ্বংসাত্মক। কেননা, ইসলাম সমাজে অনৈতিক সমস্যার বাস্তব সমাধান দেয়। মাহরাম ছাড়া (যেমন : স্ত্রী, মা, বোন, মেয়ে বা খালা) একজন পুরুষ ও মহিলাকে নির্জনে অবস্থানের অনুমতি দেয় না ইসলাম; বরং নৈতিক বিপর্যয়ের দিকে যাওয়ার আগেই মন্দকে উপড়ে ফেলে। অন্যায় আচরণ ঘটার পরিবেশকে রুদ্ধ করে। নারীরা যদি পোশাক-আশাক ও আচার-আচরণে ইসলামি মানদণ্ড অনুসরণ করে, তাহলে যৌন-হয়রানির ঘটনা দ্রুত কমে যাবে এবং আমরা সমাজে নারী নির্যাতনের একটা প্রধান উৎস দূর করতে সক্ষম হব।
আমরা জানি, প্রজননতন্ত্র ছাড়াও নারী-পুরুষের মধ্যে আরও অনেক পার্থক্য রয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্যের সূত্র প্রোথিত আছে মস্তিষ্ক ও এর গঠনে। তবে পার্থক্যটি স্বভাবগত। যতই সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং করা হোক না কেন, নারী-পুরুষের এ পার্থক্য কখনো পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অসংখ্য কেইস স্টাডি এর প্রমাণ। হ্যাঁ, নারী-পুরুষ নিঃসন্দেহে সমান; কিন্তু এই সমতা মানে একজন আরেকজনের মতো আচরণ করবে, তা নয়। কেননা, নারীদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে, যা পুরুষের চেয়ে ভিন্ন।
ইসলামি আইন ও শিক্ষার বিরোধিতা মানে বিজ্ঞানেরই বিরোধিতা। বিজ্ঞান দেখিয়েছে, উভয় লিঙ্গের মধ্যে সহজাত পার্থক্য রয়েছে এবং এটাই উভয় লিঙ্গের সৌন্দর্য।
ইসলামের সামাজিক কাঠামো আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ পাশ্চাত্যসমাজ থেকে বেশ ভিন্ন, যদিও পশ্চিমা আধুনিক বিজ্ঞান নিজেই নারী ও পুরুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত লিঙ্গ-পার্থক্য সম্পর্কে ইসলামের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মুসলিমবিশ্বের মডার্নিস্ট ইসলামি গবেষকরা নব্য নারীবাদ ও ব্রেইন সেক্সের বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন নন। এ তালিকায় সেকুলার ও অ্যাপোলোজেটিকরাও থাকবে।
কিছু মুসলিম দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান নারীবাদী, বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিন বা মরক্কোর ফাতিমা মারানিসির মতো নারীবাদীরা এখনো প্রাচীন বিজ্ঞানের যুগে বাস করছে। তারা জোর দিয়ে বলে যে, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-পার্থক্য এবং লিঙ্গ-বৈষম্য সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে দূর করা যেতে পারে।
যাইহোক, নারীবাদী ও সোশাল ইঞ্জিনিয়াররা নারী-পুরুষের প্রকৃতি বদলাতে যতই চেষ্টা করুক না কেন তারা ব্যর্থ হবে। কারণ, নারী-পুরুষের জন্মই হয় ফিতরাতের ওপর। সমাজ আবার তার প্রকৃত গন্তব্যে ফিরে যাবেই।
মুসলিম নারীর আপন রূপ
কবি ইজদেহার আলবোইহার হিজাব-সংক্রান্ত চমৎকার একটি কবিতা লিখেছেন। বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নিচে তুলে ধরা হলো,
তুমি আমাকে দেখে বলো জুলুমের শিকার
কারণ, আমার পোশাক-আশাকের আকার
তুমি তো জানো না আমার ভেতরের কথা
আমার যে পোশাককে তুচ্ছজ্ঞান করো
তা আমার গৌরবের আভা।
আমার শরীরের দিকে নজর দাও কেন?
কথা বলো আমার সঙ্গে; আমার নারীসত্তার সঙ্গে কেন?
আমি ব্যক্তিত্বময়ী, নই কারও দাস
আল্লাহর সন্তুষ্টিকে করি হৃদয়ে চাষ
আমারও আছে গলা, বলব সে কথা?
হৃদয়ে বহন করি স্রষ্টার বাণী—
হে নারীসম্প্রদায়, জড়িয়ে নাও চাদরের আবরণে,
যেন মন্দ পুরুষেরা ক্ষতির চিন্তাও না করে মননে
কোনো পুরুষ বলেনি আমাকে এ পোশাক পরতে
রবের বিধান মান্য করছি, যাবে না পারা ছাড়তে।
শোষিত আমি একদমই নই
স্বাধীনতার স্বাদ পুরোপুরি পাই
উঠি বেয়ে পাহাড়, পাড়ি দেই সাগর
দিগন্তবিস্তৃত পাড়ি দেয় আমার নজর।
আল্লাহই তোমাকে-আমাকে দিয়েছেন স্বাধীনতা
যখন তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইসলাম
অনেকে ভাবে, আমার চারপাশে জুলুম
কীভাবে আমি এ ফাঁদে পড়লাম!
আমার পর্দা আমার উপশম
পর্দাই আমার অন্তরের পবিত্রতার মলম
পর্দা করে অর্জন করেছি রবের ভালোবাসা
দুনিয়ার কোনো তরবারির বিরুদ্ধে নেই কোনো আশা
পর্দা আমায় দিয়েছে সুরক্ষাবেড়ি
দুষ্টু লোকের সাথে বেঁধে দিয়েছে আড়ি
বলছি আমি তোমাকে, ‘পর্দার আড়ালে
চিরকাল রইব আমি প্রশান্তিতে।
হিজাবি বোনদের জন্য উদ্দীপনামূলক এক ইংরেজি কবিতা উল্লেখ করছি এখানেঃ
In the realm of fabric’s grace,
Where modesty finds its rightful place,
A symbol of faith and self-expression,
Lies the essence of a hijab’s confession.
Embroidered threads, a tapestry,
Woven with stories, ancient and free,
Adorning heads with dignity and pride,
A shield against a world’s misguided stride.
Oh, hijab, veil of woven art,
You speak of courage from a tender heart,
A choice made willingly, without a plea,
To cherish one’s soul and embrace humility.
Beyond the strands of silk and lace,
A sanctuary of inner grace,
You whisper tales of strength and might,
Invisible battles fought each day and night.
For in your folds, a woman’s voice,
Resonates with a powerful rejoice,
Her dreams and passions unbound,
With resilience, she walks on sacred ground.
Through winds that howl and sun’s embrace,
You shield her with a tender grace,
A barrier against prejudice and scorn,
Preserving her identity, since she was born.
In your embrace, cultures intertwine,
A tapestry of colors, a design divine,
From East to West, in every land,
A symbol of unity, stitched by hand.
Amidst the chaos, you inspire,
A beacon of hope, a soul’s desire,
Embracing diversity, breaking down walls,
Building bridges, where compassion calls.
Oh, hijab, a symbol so pure,
A testament to beliefs, unwavering and sure,
You hold within your folds, a sacred bond,
Connecting hearts in a world so fond.
Through veils of fabric, the soul transcends,
Boundaries of time, where love amends,
A choice to be cherished, never constrained,
Hijab, an emblem of freedom attained.