প্রসঙ্গ: কুরআন জার্নাল
আমি নিজে সেই ২০১২ থেকে, অর্থাৎ যখন থেকে আমার হিফজ যাত্রা শুরু তখন থেকে, চেষ্টা করি বিভিন্ন উপায়ে নিজেকে ট্র্যাকে রাখতে। কখনো নিজের জন্য হিফজ/রিভিশন ট্র্যাকার বানিয়ে, কখনো নিজের উপলব্ধি/শিক্ষিকার বলা কোনো কথা নোট করে রেখে। কখনো নিজের জন্য বুকমার্ক বানিয়ে। ইদানিং কুরআন জার্নাল কথাটা দেখি। অনেকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কোনো একটি আয়াতের ব্যাখ্যা থেকে যা শিখলেন ডায়েরীতে লিখে রাখেন। সেই সাথে ছবি এঁকে, আয়াত লিখে, প্রাসঙ্গিক হাদীস ইত্যাদি লেখেন। আমার দেখতে সুন্দর লাগে। মেন্টাল থেরাপি হিসেবে ভালো। অবসর সময়ে যখন সিরিয়াস কিছু করতে ভালো লাগে না তখন করার মত একটি কাজ। বাচ্চাদের কুরআন পড়তে উৎসাহ দেয়ার জন্য ভালো একটি মাধ্যম।
এবং, এটা হিফজ/রিভিশনে ব্যস্ত ছাত্রীদের নিয়মিতভাবে করার জন্য অনুপোযোগী একটি কাজ।
একথা এজন্য বললাম যে, আমার এটা দেখতে ভালো লাগে এবং করতেও মন চায়। কিন্ত সেটা করতে গেলে রিভিশনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। Once in a while ঠিক আছে বিষয়টা। কিন্তু নিয়মিত এটা নিয়ে সময় ব্যয় করা হিফজ বা রিভিশনের ছাত্রীর জন্য ঠিক নয়। আপনারা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন- সাপ্তাহিক টাস্কের পর এই কাজগুলো এবং আরো অনেক শখের কাজ করার মত সময় আপনাদের থাকে কিনা। অথবা, এরকম শখের কাজের পর সাপ্তাহিক টাস্ক ঠিকমত করা হয় কিনা।
তাই, আপনি যদি ইনটেনসিভ রিভিশন বা হিফজের ছাত্রী হন, অথবা আপনার রিভিশন/রিপিট ইত্যাদি অনেক নিয়মিত করতে হয়, তাহলে কুরআন জার্নালিংয়ে সময় দেয়াটা খুব বুদ্ধির কাজ না। অন্তত, যেই সময়টা আপনি নষ্ট করতেন এমনিই, সেসময় ছাড়া আর কোনো সময় এর জন্য ব্যয় করবেন না, যখন আপনি হিফজ/রিভিশন ছাত্রী। বিশেষভাবে তখন, যখন আপনি কোনো কোর্স করছেন।
এই কথা অবশ্যই ঢালাওভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য না। অনেকে 5 মিনিটে সুন্দর করে এঁকে ফেলতে পারেন, অনেকে এক লাইন করে রোজ লিখে লিখে সুন্দর কিছু করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত এগুলোতে কত সময় ব্যয় হয়, এটা আমাদের যার যার নিজেদের বুঝতে হবে। কিন্তু একজন কুরআন ছাত্রী আর শিক্ষিকা হিসেবে বলছি, হিফজের ছাত্রীদের অনেক শখের কাজ ছাড়তে হয় শেষ পর্যন্ত। ভালবেসেই ছাড়ি আমরা- সেই সব শখ যা কুরআন আর আমাদের মাঝে চলে আসে। জীবনে সময় অনেক কম। করার কাজ অনেক আছে- শেখার অনেক কিছু আছে, সত্যি বলতে গেলে আমরা ইসলামের বেসিক জিনিস জানি না। এখন তাই অনেক সময় এদিক ওদিক ব্যয় না করাই উত্তম।
পুরো কথাটার সারমর্ম: আপনাকে হিফজে উৎসাহ দেয় এমন ক্রিয়েটিভিটি থাকা ভালো। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেটা আরও ভালো এবং কখনো জরুরী। কিন্তু যা কিছু অনেক সময় বা মনোযোগ নিবে, সেটা নিয়ে হিফজ স্টুডেন্টের নিয়মিত ব্যস্ত থাকা তাদের পড়ার জন্য ভালো না। তাই এই ধরণের যেকোনো কাজ অলস সময়ের জন্য রাখবেন, যদি করতেই হয়। জীবনের সর্বোত্তম সময় ব্যয় করুন কুরআন মুখস্থ এবং রিভিশন মজবুত করতে।
~ ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে উস্তাজা নায়লা নুযহাত