ধরে নিলাম, মিষ্টি মেয়ের মতো একটা কিউট গার্লফ্রেন্ড ছিল তোমার। তার সাথে তুমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছ। পরান পাখির চোখের তারায় তাকিয়ে তুমি হারিয়ে যেতে বহুদূর। অসংখ্যবার তার হাত ধরে হেটে বেড়িয়েছ ফুটপাতের উঁচু-নিচু রাস্তা। হুডতোলা রিকশায় মজা নিয়েছ প্রায়ই। কিংবা ধরেই নিলাম যে, দুয়েকবার তাকে সাথে নিয়ে বিছানাও গরম করেছ!
.
হারাম রিলেশান থেকে ফিরে আসার এই এতদিন পরেও পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো মাঝেমধ্যেই গোখরো সাপের মতো তোমাকে দংশন করে। “কত্ত খারাপ ছিলাম আমি! আমার এই ভয়াবহ গুনাহগুলো আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করবেন?” এমন নানা চিন্তা তোমায় হতাশ করে দেয়। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ো তুমি।
.
ভাই আমার, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। কাফির ব্যতীত কেউই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। ইবলীস শয়তান তো এটাই চায় যে, তুমি আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও, আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ো। কারণ, যখনই তুমি আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাবে, তখনই তুমি আবারও গুনাহের দিকে ফিরে যাবে।
.
শুনো ভাইয়া, আল্লাহ্ তো বলেই দিয়েছেন যে, তুমি যদি তাঁর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ না হও, তবে তিনি তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত নং-৫৩]
.
দেখলে তো? আল্লাহ কত্ত ক্ষমাশীল। তুমি যদি খালিস নিয়তে তাওবা করো, তাহলে তিনি তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। সব। শুধু শর্ত হচ্ছে, খালিস তাওবা করতে হবে। তাওবাতুন নাসুহা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তোমাকে শুধু ক্ষমাই করবেন না, তোমাকে জান্নাতেও প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ্ বলেন—
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো; আন্তরিক তাওবা। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত…” [সূরা আত-তাহরিম, আয়াত নং-৮]
.
এরকম আরও অনেক আয়াত আমি তোমাকে দেখাতে পারব, যেখানে আল্লাহ বলেছেন যে, বিশুদ্ধ তাওবা করলে তিনি অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। ক্ষমার এত এত প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন, তবুও কী করে তুমি তাঁর ব্যাপারে হতাশ হও? আমি আশাবাদী, তুমি আর কক্ষনো আল্লাহর ক্ষমার ব্যাপারে হতাশ হবে না, তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হবে না।
.
তুমি তো বুদ্ধিমান ছেলে। তোমাকে তো অতশত বোঝানোর দরকার নেই। তুমি যদি বিশুদ্ধ তাওবা করে থাকো, গুনাহের দিকে আর পা না বাড়াও, তবে আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দেবেন। এমনকি তিনি তোমার মর্যাদাও বাড়িয়ে দেবেন। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে চলো, একটি অসাধারণ গল্প শোনাই তোমাকে। এটা মিথ্যা কোনো গল্প নয়। সত্য গল্প। দেড় হাজার বছর আগের গল্প।
.
একদিন জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূলের খিদমতে হাজির হলো। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন।’
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলার আত্মীয়কে ডেকে পাঠালেন। তারপর বললেন, ‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখো এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’
.
সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে এল)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড় তার (শরীরের) ওপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন।
.
এ পর্যন্ত পড়ে তুমি হয়তো ভাবছ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ব্যভিচারিণীর জানাযার নামায পড়লেন? হ্যাঁ, তিনি পড়েছিলেন। আর তোমার মনের এই সেইম প্রশ্নটা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মনেও জেগেছিল।
.
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই মহিলার জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘(উমার! তুমি জানো না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তাওবা করেছে যে, যদি তা মদীনার সত্তর জন লোকের মধ্যে বণ্টন করা হতো, তা তাদের জন্য যথেষ্ট হতো। এরচেয়ে উত্তম কোনো কাজ কি তুমি পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকেই কুরবান করে দিল?’ [রিয়াদুস সালিহীন, হাদীস নং-২৩, সহীহ হাদীস]
.
সুবহানাল্লাহ! একজন ব্যভিচারী নারীর তাওবা মদীনার সত্তর জন লোকের ক্ষমা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত! চিন্তা করতে পারছো? আল্লাহ এই নারীকে শুধু ক্ষমা করেই ক্ষান্তি দেননি; বরং তিনি তার মর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যার কারণে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার জানাযা পড়েছিলেন।
.
সুতরাং ভাই আমার, আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হোয়ো না। তুমি যদি বিশুদ্ধ মনে তাওবা করো, প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকো, তাহলে তিনি তোমাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। তোমাকে ক্ষমা করে তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিলে আল্লাহর ভান্ডার থেকে কি কোনো কিছু কমে যাবে? নিশ্চয়ই কমবে না। তাঁর ভান্ডার অসীম, অন্তহীন। তাহলে তিনি তোমাকে কেন ক্ষমা করবেন না? কেন হতাশ হচ্ছ তুমি?
.
.
(সংগ্রহীত)