❝হাসানাহ❞ নিয়ে এভাবে কখনো আমরা চিন্তা করেছি?
•
•
আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রাসুলের যুগে এক মুসলিম ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি তার ইয়াদতে যান। গিয়ে দেখেন, সে অসুখে কাতর হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। পরিবার জানায়, তার অবস্থা চরম সংকটাপন্ন। রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ইদানীং তুমি কোনো দুআ করেছিলে? আল্লাহর কাছে বিশেষ কিছু চেয়েছিলে? লোকটি বলে, হ্যাঁ করেছিলাম। বলেছিলাম, আল্লাহ! যদি পরকালে আমার কপালে কোনো শাস্তি থাকে, তাহলে তা দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। রাসুল বলেন, তুমি এমন দোয়া করতে পারো না। পরকালের শাস্তি তুমি দুনিয়াতে বহন করার ক্ষমতা রাখো না। তুমি এমন কেন বললে না,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
(হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ইহ-পরকালে যাবতীয় কল্যাণের অধিকারী করুন এবং আমাকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দিন)। এই বলে আল্লাহর রাসুল তার সুস্থতা চেয়ে দুআ করলে, লোকটি দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠে।’
তাফসিরে রুহুল মাআনিতে আল্লামা আলুসি রহ. এই হাসানাহ বা ইহ-পরকালের কল্যাণ সংক্রান্ত বেশকিছু ব্যাখ্যা এনেছেন। যেমন, ইহকালের হাসানাহ বা কল্যাণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ
• কাতাদা রহ.-এর মতে, হাসানাহ মানে সুস্থতা ও অল্পেতুষ্টি।
• আলি রা. বলেন, হাসানাহ দ্বারা উদ্দেশ্য নেককার স্ত্রী।
• হাসান বাসরি রহ. বলেন, হাসানাহ মানে ইলম ও ইবাদত।
• সুদ্দি রহ. বলেন, এ শব্দের উদ্দেশ্য হালাল রিজিক।
• ইবনে উমর রাদি.-এর মতে, হাসানাহ মানে অনুগত সন্তান।
• তিনি আরও বলেন, হতে পারে এর উদ্দেশ্য জগতজোড়া খ্যাতি।
• জাফর রহ. বলেন, দুনিয়াবি হাসানাহ মানে সুস্থতা ও পর্যাপ্ত সম্পদ।
• অনেকের মতে, হাসানাহ বলতে শত্রুদের উপর বিজয় অর্জন উদ্দেশ্য।
• একদল আলিম বলেন, বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য কিতাবুল্লাহর ফাহম।
• আরও অনেকে বলেন, মূলত হাসানাহ মানে পুণ্যবান লোকদের সাহচর্য।
এরপর পরকালীন কল্যাণের ব্যাখ্যায় এসে আলুসি রহ. বলেন:
• পরকালের কল্যাণ হিসেবে কেউ বলেছেন বান্দার জান্নাতপ্রাপ্তির কথা।
• কারো মতে, কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা ও কঠিন হিসাব থেকে মুক্তি।
• আলি রাদি. বলেন, এর দ্বারা বরং হুরে-ঈন লাভ করা উদ্দেশ্য।
• অনেকের দাবি, পরকালের কল্যাণ মানে আল্লাহর দিদার লাভ করা।
ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন: সর্বোপরি, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ‘হাসানাহ’ বা কল্যাণ শব্দটিকে নাকিরা বা অনির্দিষ্ট রেখেছেন এ-জন্যই যে, ইহ-পরকালের যাবতীয় কল্যাণ যেন বান্দা খুব সহজেই এই দুআর মাধ্যমে চেয়ে নিতে পারে।
এরপর তিনি একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন: একদল লোক হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে দোয়া চাইলে, তিনি তাদের জন্য উপরোক্ত দুআটি করেন। বলেন:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
(হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ইহ-পরকালে যাবতীয় কল্যাণের অধিকারী করুন এবং আমাদের সবাইকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দিন)। তারা যেন তুষ্ট হতে পারল না। বলল, আরও কিছু দুআ করুন না! আনাস রা. বললেন, আর কী চাও? ছোট্ট এ দুআয় ইহ-পরকালের সবই তো তোমাদের জন্য চেয়ে নিলাম…
তথ্যসূত্রঃ
– সুরা বাকারা, আয়াত: ২০১
– সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৯১
– তাফসিরে রুহুল মাআনি ১/৪৮৬
– তাফসিরে কুরতুবি ২/৪৩৪
(সংগ্রহীত)