হাওরে অকালবন্যার পানি নামতে না নামতেই আরেকটি ঢল আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। চেরাপুঞ্জিসহ আশপাশের এলাকায় এখনো বৃষ্টি চলছে, তা আরও বাড়তে পারে। এই ঢলের পানি সুনামগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোর পার্শ্ববর্তী নদ-নদীগুলোতে এসে জড়ো হতে পারে।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে এমনটা বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণেও একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এখনো বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি বাড়তে পারে। আর স্থানীয় লোকজন বলছেন, এর ফলে এসব নদ–নদীর পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়তে পারে। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও দুর্বল অবস্থায় থাকা বাঁধগুলো ভেঙে ওই পানি হাওরে প্রবেশ করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, দেশের হাওর এলাকায় মোট ৯৬টি হাওর রয়েছে। এ পর্যন্ত ছয়টি হাওরে ও চারটি বিলে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার ও চাপতির হাওর হচ্ছে বড়, বাকিগুলো ছোট হাওর। এখনো প্রধান ও বড় হাওরগুলো নিরাপদে আছে। সেখানে এখনো ঢলের পানি প্রবেশ করেনি।
আমরা এখন চেষ্টা করছি সামনে যে ঢল আসতে পারে, তা থেকে যাতে ফসল রক্ষা করা যায়।’
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল হাওর এলাকা পরিদর্শনে গেছে। আগাম বন্যার ফলে হাওরের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সরেজমিন দেখা ও দিকনির্দেশনা দিতে তারা দিনভর স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের ঢলে হাওরের সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসলে পানি প্রবেশ করেছে। এর অর্ধেক ফসলও নষ্ট হলে আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ কোটি টাকা।এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আমরা এখন চেষ্টা করছি সামনে যে ঢল আসতে পারে, তা থেকে যাতে ফসল রক্ষা করা যায়।’ এরই মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ধানের ক্ষতির তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করা না গেলে ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য ঢল মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চার হাজার হেক্টর আয়তনের চাপতির হাওরে বাঁধ ভেঙে ঢলের পানিতে সব ফসল তলিয়ে গেছে। হাওরগুলোর ভূপ্রকৃতি অনেকটা ভাতের থালার মতো। মানে একবার পানি প্রবেশ করলে সেখান থেকে আর পানি বের করা যায় না। ফলে যা ফসল থাকে, তার বড় অংশের ক্ষতি হয়।
আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে উজানে আবারও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তবে গতবারের চেয়ে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম হতে পারে। নতুনআরিফুজ্জামান ভূইয়া, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীসরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বর্তমানে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৯টি নদ-নদীর পানির উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করছে। এর মধ্যে মাত্র দুটির পানি বাড়ছে, বাকিগুলোর কমছে। যেসব অঞ্চলে বাঁধ ভেঙেছে, সেখানে মূলত নদী ও হাওরের সীমানা রক্ষাকারী বাঁধগুলো চুইয়ে ও ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে।এ ব্যাপারে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে উজানে আবারও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তবে গতবারের চেয়ে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম হতে পারে। নতুন মেরামত হয়েছে এমন বাঁধগুলো ছাড়া বাকি বেশির ভাগ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই।আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসের শেষের দিকে দেশের ভেতরে ও বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।