কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কঠোর লকডাউন শিথিলের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে মহাসড়ক থেকে শাখা সড়ক সর্বত্রই তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি পশুবাহী গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কগুলোতে যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়।
সাভারে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে বাড়াইপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত আরিচামুখী লেনে ৮ কিলোমিটার ও গেন্ডা থেকে হেমায়েতপুর ৬ কিলোমিটার এবং টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে আশুলিয়া বাজার থেকে ধউর ৩ কিলোমিটার ও জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় ঢাকা থেকে আরিচাগামী লেনে এ যানজটের ফলে গাবতলী এলাকা থেকে সাভার পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এছাড়া সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে নবীনগর-বাইপাইল পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। সেই সাথে তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় গাড়িতে আটকে থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়ছে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীরা।
এদিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়ক আট লেন করার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) খোঁড়াখুঁড়ি এবং সাভার রেডিও কলোনি স্কুলমাঠে গরুর হাটের কারণে মহাসড়ক থেকে গরুগুলো ট্রাক থেকে নামানোর সময় যানজটের সৃষ্টি হলে তার প্রভাব পুরো সড়কে পড়ছে।
সাভার ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদে সড়কে ঘরমুখো মানুষ ও পশুবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখ সাভারের সব গুলো সড়কে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।
ট্রাকচালক ফজলুর রহমান বলেন, “রাইত ৪টা বাজে আশুলিয়া বাজার থাইকা রওনা দিছি। সকাল সাড়ে ৯ টা বাজে এহোনো বাইপাইল পার হইতে পারি নাই। পুরা রাস্তাই জাম।”
সকাল ৯ টার দিকে রহমান মিয়া নামে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, “ভাই রাত সাড়ে ৪ টায় চন্দ্রা থাইকা গাড়িতে বইসা আছি। আইজকা শ্যামলীতে যাইতে পারব কি না সন্দেহ আছে। রাস্তায় এতো পরিমাণ জ্যাম দেখার কেউ নাই।”
বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর খসরু পারভেজ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে গাড়ির চাপ বেশি। যাত্রীবাহী ও পশুবাহী গাড়ির সংখ্যা বেশি। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে খানাখন্দের কারণে যানজট বেশি।
সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাজ্জাদ করিম খান জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এ জন্য সকালে মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিল। দুপুরের পর থেকে স্বাভাবিক যান চলাচল করছে। আমরা যানজট নিরসনে কাজ করছি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে তীব্র যানজট
এদিকে, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নলকায় ঝুঁকিপূর্ণ সরু সেতু, ফোর লেনের কাজ চলমান ও অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ঈদযাত্রায় চালক ও যাত্রীদের এ বছরও ন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের সড়ক পথে ঘরে ফেরার অন্যতম রুট বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। প্রতি বছর ঈদের আগে নানা কারণে মহাসড়কটি মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বছরেও মহাসড়কের নলকার সেতুটি দুর্ভোগের প্রধান কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সেতুর উভয় প্রান্তে সব সময় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো এ যানজট তীব্র হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থেকে নলকা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার, কখনো নলকা থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত এবং হাটিকুমরুল থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।
এ ছাড়া অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় থেকে মুলিবাড়ী পর্যন্ত তীব্র যানজট,আবার কখনো বাম্পার টু বাম্পার গাড়ি ধীর গতিতে চলছে।
গাড়ি চালক আহমদ আলী ও ইব্রাহীম শেখ জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় মহাসড়কের নলকা সেতুটি আমাদের বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটিতে গাড়ি ওঠার আগেই গতি কমিয়ে শ্লথ গতিতে পার হতে হয়। সেতুর ওপর ২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালালেই সেতুটি কেঁপে ওঠে। সেতুটির কারণে গত ১০ বছর যাবৎ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বাসযাত্রী আশরাফুল ইসলাম, সোহেল রানা, রিনা পারভীন জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পরই যানজটের কবলে পড়তে হয়। মাত্র ২২ কিলোমিটার এলাকা পার হতে ৪/৫ ঘণ্টা লেগে যায়। এতে সব সময় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, সেতুটির কারণে এই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে গাড়ির চাপ, অন্যদিকে সেতু দিয়ে গাড়ি পার হতে সময় লাগছে।