১৯৭১ সালে পাকিস্তানে (তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তান) গড় আয়ু ছিল ৫৩ বছর। এ সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। অন্য কথায়, পাকিস্তানের মানুষের তুলনায় সে বছর বাংলাদেশের মানুষ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম ছিল। এটি ছিল একই দেশের দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বৈষম্য।
একাত্তরের পরে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় উন্নয়নের জন্য নিজস্ব অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে, নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পনা করেছে, নিজস্ব ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী তহবিল বরাদ্দ করেছে, নিজস্ব ক্ষমতায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ যে স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোটি বিশ্বের কম দেশগুলিতে দেখা যায়।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গড় আয়ু ছিল ৬১ বছর। তার পর থেকে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের গড় আয়ু এখন ৬৭ বছর। অন্য কথায়, গড় আয়ু ২৭ বছরে ৬ মাস বেড়েছে। একই সাথে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ১১ বছর বেড়েছে। ৫০ বছরে, পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ১৪ বছর বেড়েছে।
আয়ু বৃদ্ধির কারণ হ’ল অপরিণত মৃত্যুর হ্রাস। শিশুমৃত্যু সহ অকাল মৃত্যু বাংলাদেশে নেমে এসেছে। একই বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে যে এক হাজার জীবিত বাচ্চা যদি একাত্তরে জন্মগ্রহণ করত, তবে এক বছর বয়সের আগে ১৪৮ শিশু মারা যেত। এখন ২৫ শিশু মারা গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভাল ছিল। পাকিস্তানে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ১৩৯ টি। এখন এই হার ৫৫। অন্য কথায়, পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ।
শুরু থেকেই, মাতৃস্বাস্থ্যের উপর জোর দিয়েছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সময় একজন মা গড়ে ছয় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। দৃঢ় পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবাদির কারণে মোট উর্বরতার হার (টিএফআর) হ্রাস পেয়েছে। এখন টিএফআর হয় ২.৩। এছাড়াও, প্রসবকালীন, পেরিনিটাল এবং প্রসবোত্তর পরিষেবার পরিধি এবং গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলি সরকারী শিশু স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া সন্তানের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন ধরণের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি আন্তর্জাতিক প্রশংসা পেয়েছে।
কেবল শিশু মৃত্যুহারই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর হারও ৫০ বছর আগে থেকে নেমে এসেছে। এর আগে, এক বছরে প্রতি এক হাজারের মধ্যে ১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। এখন তা নেমে এসেছে পাঁচে। অপরিশোধিত মৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়ায় দেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে।
বাংলাদেশের এই উন্নতি কেবল পাকিস্তানের তুলনায় নয়। সার্কের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক বেশি। এমনকি বিশ্ব গড় হিসাবেও বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু বাংলাদেশের জনগণের তুলনায় ১৩ বছর বেশি ছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই দেশের মানুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে মাস বেশি।